#সুমিতের_গোয়েন্দাগিরি#সৌরভ_কুমার_নাথ

|| কিশোর সাহিত্য | ছোটগল্প ||
#সুমিতের_গোয়েন্দাগিরি
#সৌরভ_কুমার_নাথ

এই দরজাটা বন্ধ থাকে কেন মা? একটা টেনিস বল হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে জিজ্ঞাসা করলো সুমিত। বাড়িটা অনেক পুরোনো, ছোটবেলা থেকে এই বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে খেলেছে সুমিত কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ওই দরজাটা বন্ধ দেখেছে। একান্নবর্তী পরিবারের দ্বিতীয় বৌমা অনিতা। ছাদ থেকে আনা কাপড়চোপড় ভাঁজ করতে করতে প্রশ্নটা শুনেও না শোনার ভান করে অনিতা বলে তুই চান করতে গেলিনা এখনো? দুটো তো বাজতে চললো। সুমিত দের সামার ভেকেশন চলছে, বাড়ি থাকলেই হুড়োহুড়ি ছোটাছুটি লেগেই আছে। আরো কটা বাচ্চা কাচ্চা আছে বাড়িতে তবে সুমিতই লিডার।

বন্ধ দরজাটা খুব টানে সুমিতকে, কি জানি কি আছে ওই বন্ধ দরজার পেছনে। সুমিত ভুতের সিনেমায় দেখেছে ওই সব ঘরে ভুত থাকে। তালাটাও অনেক পুরোনো, কবে খোলা হয়েছে ভগবান জানে? সুমিত চিলেকোঠার ঘরে একটা পুরোনো বাক্স পেয়েছে ওতে অনেক পুরোনো জিনিসের মধ্যে একগোছা চাবিও ছিল। সুমিত স্নান করে খেয়েদেয়ে চলে যায় সেই ঘরে সাথে পাখি আর টিনা। পাখি সুমিতের কাকার মেয়ে আর টিনা পাখির মাসির মেয়ে, পাখির মাসীরা দুদিন হল ঘুরতে এসেছে ওদের বাড়িতে। ওদের মধ্যে গোপন আলোচনা চলতে থাকে, কাল দুপুরে যখন সবাই ঘুমোতে যাবে তখন ওরা ঘুমাবে না। একসাথে সবাই এখানে দেখা করবে। ওই দরজার ওধারে কি আছে সুমিতের জানতেই হবে। ঠিক দুপুরে সবাই যখন ঘুমিয়ে গেছে, তিন মূর্তি নেমে আসে একতলায় চাবির গোছা নিয়ে সেই দরজার সামনে। সুমিত তালার কোম্পানি লক্ষ্য করে, গোদ্রেজ। গোছায় দুটো গোদ্রেজ চাবি আছে। ঠিক চাবিটা বেছে নিয়ে তলায় ঢুকিয়ে চাবিটা ঘোড়াতেই তালাটা খুলে যায়। তারপর ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করে সুমিত, পেছনে পেছনে বাকি দুজন।

ঘরটা অন্ধকার হলেও খুব পরিষ্কার। কোথাও কোনো ধুলো নেই। আস্তে আস্তে সাবধানে এগিয়ে চলে ওরা। পাখি একটু ভয় পেলেও হাতটা চেপে ধরে টিনা। একটু এগিয়ে যেতেই ওদের হাত পা হিম হয়ে যায়, একি একটা খাট তাতে কেউ যেন ঘুমিয়ে আছে। এরকম একটা বন্ধ ঘরে কে থাকতে পারে, নিশ্চই ভুত বা রাক্ষস হবে। হাত পা অসার হয়ে যায় ওদের। উল্টো দিকে ফিরে দেখে এক ছায়ামূর্তি ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিন জন একসাথে চিৎকার করে ওঠে বাঁচাও, বাঁচাও। ছায়া মূর্তি দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে থাকে ওদের দিকে। ততক্ষনে খাটে সোয়া রাক্ষসটাও উঠে বসেছে। মনে হচ্চে এখুনি দাঁত বের করে খেয়ে নেবে ওদের। তখনই হটাৎ লাইট টা জ্বলে ওঠে। পেছনের ছায়া মূর্তি টাকে এখন চেনা চেনা লাগছে, বড়জেঠিমা আর খাটে শুয়ে আছে বড় জেঠু। এই বন্ধ ঘরে দুটো মানুষ থাকে যারা আমার বড় জেঠু আর জেঠিমার মতো দেখতে। রাক্ষস রা তো অন্যের রূপ ধরতে পারে, চাঁদমামায় পড়েছিল সুমিত। কিন্তু পালাবে কোথা দিয়ে। এদিকে ওদের চিৎকার শুনে অনেকে ছুটে এসেছে। বাড়ির সবাই অন্য একটা দরজা দিয়ে ঢুকছে ওই ঘরে। এই দেখে আরো ঘাবড়ে যায় ওরা। কোথায় এল ওরা? সবাই ওদের বাড়িয়ে লোকের মতো দেখতে। তার পর যেদিক থেকে সুমিত রা ঢুকে ছিল সেই দিক দিয়ে আসে সুমিতের মা অনিতা। মা কে দেখে কিছুটা সাহস ফিরে পায় সুমিত, বলে পালিয়ে চলো মা। এর সব রাক্ষস মানুষের রূপ নিয়ে আছে এখুনি আমাদের খেয়ে নেবে। বাবার মতো দেখতে রাক্ষস টা হটাৎ এগিয়ে এসে সুমিতের কান টা টেনে বাইরে নিয়ে গেল। বাইরে গিয়ে সুমিত আরো অবাক হয়ে গেল বাইরেটও ওদের বাড়ির মতোই। অবাক হয়ে যায় সুমিত ভুতদের কত বড় ক্ষমতা। ওরা যখন তালা খোলা দরজাটার সামনে দাঁড়ালো তখনও সুমিত বুঝতে পারেনি কি চলছে।

-" তুই পুরোনো বাথরুমের দিকের এই তালা খুলে বড় জেঠার ঘরে ঢুকেছিলি? কেন তোর জেঠা তোকে ঘরে ঢুকতে দেয়না? অসভ্য ছেলে কোথাকার!"

এইবার সুমিত বুজতে পারে ব্যাপার টা কি। তার পর মুখ নিচুকরে পালিয়ে গিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে। তার পর থেকে সুমিত আর কোনো গোয়েন্দাগিরি করতে যায় নি। সুমিত এখন এম.বি.এ পড়ছে,তবে টিনা এখনো ফোন করে জিগ্যেস করে, সুমিত তোদের বাড়ির রাক্ষসেরা কেমন আছে রে?সুমিত হাসে আর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, ভালো আছে!!

Comments

Popular posts from this blog

#অনুগল্প#মোটিভ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#ছোট_গল্প#বিজানুর_বিষে_নারদ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#অসুখ