#পটলবাবুর_পটল_তোলা#সৌরভ_কুমার_নাথ

#পটলবাবুর_পটল_তোলা
#সৌরভ_কুমার_নাথ

ছোটবেলায় একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে। তখন ক্লাস এইটে পড়ি। যতটা না পড়ি তার চাইতে গুন্ডামি বেশী করতাম স্কুলে। সহপাঠীদের মধ্যে বাপি আমার বেশ কাছের বন্ধু ছিল। আমার বইয়ের ঐতিহাসিক চরিত্র গুলোতে কাল্পনিক কথোপকথন লিখতাম, যেমন মহারানা প্রতাপ ঘোড়ার উপরে বসে আছেন, আমি লিখলাম "এই ঘোড়া বেশি নড়াচড়া করিসনা পরে যাবো যে" বা গান্ধীজি এবং মোহাম্মদ আলী জিন্না দুজনে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তাতে লিখলাম " চলো জিন্না ভাই আমরা ভারত ভাগ করে খাই" ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন বাপি একটা বেশ বড় কাগজ গোল করে পেঁচিয়ে নিয়ে স্কুলে এসেছে। কাগজটার উপরে লেখা " হ্যারিকেন বাজার পত্রিকা" যেই রকম খবরের কাগজ থাকে ঠিক তেমন। আর যেমন টপিক থাকে সেই জায়গায় লেখা রয়েছে " কাতলার ধাক্কায় বিরাট জাহাজ ডুবি" বা "পিঁপড়ের ধাক্কায় লুঙ্গির লরি উল্টে গেল কাঁঠাল তলায়"। আমরা তো পড়ে হাসতে হাসতে লুটোপুটি অবস্থা। বাকি ফাঁকা প্লট আমি লিখলাম। "সন্ধে বেলায় পটল তুলতে গিয়ে নিজেই পটল তুললেন পটল বাবু" প্রতিবেদন টা ছিল এইরকম।

নিজস্য সংবাদদাতা, ফুলিয়া 
তারিখ-ছয় জুন,1996 

প্রতিদিনের মতোই পটলাকান্ত ঘোষ সকালের পটল তুলে বাজারে গিয়েছিলেন। সকলে বাজারে ওনাকে পটল বাবু বলেই ডাকেন। পটল বাবু সমৃদ্ধ চাষী হলেও ওনার একটা বদনাম আছে, উনি ভয়ানক কিপটে। এবার ফসল ফলার পর বাড়ির একজনকেও পটল তুলতে দেননি কারণ তাতে পটল বাবুর পটল চুরি হবার প্রবল সম্ভাবনা আছে। দুপুরে ওনার স্ত্রী একটু কচি পাঠার মাংস আনতে বলেন। তাতে উনি ভয়ানক রেগে যান এবং পুকুর পাড় থেকে কলমির শাগ নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। বাড়িতে পৌঁছে দেখেন বিরাট আয়োজন। তিন কিলো কচি পাঠার মাংস রান্না হয়েছে। কোথা থেকে এলো এত কিছু? জিজ্ঞাসা করেন স্ত্রী কে। উত্তরে স্ত্রী বলেন আমার ভাই পবন এসেছে বউ বাচ্চা নিয়ে, আসার পথে পাঠার মাংস নিয়ে এসেছে। এতে যারপরনাই খুশি হয়ে কিলো খানেক পাঠার মাংস খেয়ে ফেলেন পটল বাবু। কিন্তু বাড়ির পেছনে যাওয়ার সময় একটি ঝুড়িতে কিছু পটল দেখে সন্দেহ হয় ওনার। ততক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি মাঠে গিয়ে পটল গুনে দেখেন প্রায় ছিয়াত্তর টা বয়স্ক পটল কম। তাতেই ভদ্দ্রোলক বুকের ব্যাথা অনুভব করেন এবং মাঠেই পটল তোলেন। পরে জানা যায় পটল বাবুকে বলে মাংস আসবেনা বলেই জানতেন তাই ছোট ছেলে রতন কে দিয়ে মাঠ থেকে কটা পটল আনিয়ে বাজারে বিক্রি করিয়ে মাংস আনান পটল বাবুর স্ত্রী। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পটল তোলা পটল বাবুর পরিবার প্রচন্ড বিপর্যস্ত।  

শেষ লেখা যখন প্রায় শেষ দেখলাম আসে পাশে কেউ নেই আমি একা লিখে চলেছি। আর সুনীল স্যার লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। লাঠির বাড়ি খেতে হয়নি সেই যাত্রায়। কারণ লেখাটা নাকি ওনার পছন্দ হয়েছিল।

Comments

Popular posts from this blog

#অনুগল্প#মোটিভ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#ছোট_গল্প#বিজানুর_বিষে_নারদ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#অসুখ