#ছোট_গল্প#রমেন_বাবুর_অন্তর্ধান#সৌরভ_কুমার_নাথ

#ছোট_গল্প
#রমেন_বাবুর_অন্তর্ধান
#সৌরভ_কুমার_নাথ

রমেন বাবুর বাড়ি বাগবাজারে কিন্তু লোহাপট্টিতে কাজের সূত্রে কলেজস্ট্রিট এলাকায় একটা পাইকারি লোহার গুদামে অন্যসব কর্মচারী দের সাথেই থাকতে হয়। বহুদিনের কর্মচারী এবং শিক্ষিত মানুষ হিসাবে ওই গুদামের যাবতীয় দায়িত্ব রমেন বাবুর হাতে। ম্যানেজার একজন আছেন বটে কিন্তু দায়িত্ব রমেন বাবুর ঢের বেশি। যথেষ্ট বিশ্বস্ত মানুষ হিসাবে শেঠ ওনাকে পুরোপুরি ভরসা করেন। আর করবেন নাই বা কেন, প্রায় পঁচিশ বছর হয়ে গেল এই গোডাউনটাই ওনার জীবন। সেই ছোট্ট বয়স থেকে এই ব্যাবসার নাড়ি নক্ষত্র গুলে খেয়েছেন। বড় শান্ত স্বভাবের মানুষ কোনো দিন কোনো কর্মচারীর সাথে দুর্ব্যবহার করতে শোনা যায়নি। শেঠ অনেক দায়িত্ব দিতে চেয়েছেন কিন্তু রমেন বাবু অস্বীকার করে বলেন, "এই সাধারণ মানুষটাকে অসাধারণ করার দরকার নেই সাহেব। আমি এখানেই ঠিক আছি।"
এহেন রমেন বাবু হটাৎ একদিন নিখোঁজ হলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি হল। বাড়িতে খবর নেওয়া হল। কিন্ত কোনো খবর পাওয়া গেলোনা। মারওয়াড়ি শেঠ নিজে অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু সব চেষ্টাই বিফল হলো।
আরো একটা খবর সবার চোখে পড়লো বিশ্ব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সুজিত ভট্টাচার্য নিজ বাসভবনে থেকে হটাৎ নিখোঁজ হয়েছেন।

রমেন বাবুর ছেলের বয়েস বারো। একটু বেশি বয়সে বিয়ে করেছেন ভদ্রলোক।নিঃস্ব অবস্থায় কাজ করতে ঢুকে, ঘাড় টা উঁচু করে দাঁড়াতেও তো সময় লাগে। তার মধ্য ছোট বোনকে সঠিক পাত্রে পাত্রস্থ করতে গিয়ে কখন যে বয়েস টা চল্লিশ ছুই ছুঁই হয়ে গেল বুঝতেও পারলেন না। 
ছেলেটার বয়েস খুব কম, শেঠ রমেন বাবুর স্ত্রী কে ওনার একটা অফিসে কাজ দিলেন। ছেলের শিক্ষাই দায়িত্ত্ব উনিই নিলেন। একজন দায়িত্ববান সৎ কর্মচারীর প্রায় সারা জীবনের সমর্পিত যোগদানের এটুকু কর্মফল দেওয়া উচিত বলেই মনে করেছিলেন শেঠ। প্রভিডেন্ট ফান্ড বলে তো কিছু ছিলোনা। তবুও শেঠ যা দিলেন তা খুব খারাপ কিছু নয়।
বছর দুয়েক বেশ ভালোই চলছিল। হটাৎ একদিন সবাই কে অবাক করে রমেন বাবু এসে হাজির। বয়েস টা যেন আরো কমে গেছে বলে মন হল সহকর্মীদের। খবর পেয়ে সবাই চলে এসেছেন স্ত্রী, ছেলে আর সর্বোপরি কোম্পানির মালিক নিজে। রমেন বাবু কিন্তু সবাই কে দেখে বেশ বিব্রত হলেন। সবাই কেন এসেছে? স্ত্রী কে কোম্পানির সারিতে তো চিনতেই পারছিলেন না।
সাহেব কি হয়েছে, আপনি এসেছেন। কিছু কি দরকার ছিল? রুমা তুমি?
এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি? বললেন শেঠ
কোথায় ছিলে এতদিন বলো? রুমা, কান্না মাখা গলায় জিজ্ঞাসা করলো।
নিজের প্রশ্ন টা দমিয়ে রেখে অবাক হয়ে উত্তর দিলেন 
সেকি? সকালে সুজিত ভট্টাচার্য বাবুর বাড়িতে কালেকশনে গেছিলাম। উনি একা মানুষ। এর আগেও ওনার অনেক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় লোহার খোল আমাদের কোম্পানি ওনার জন্যে বানিয়েছে। উনি আমাদের কাজে যথেষ্ট খুশি। ওনার মনের মত কাজ হলে উনি কোনো কার্পণ্য করেন না। আজ যখন কালেকশনে গেলাম, সুজিত বাবু আমাকে ওনার ল্যাবে বসিয়ে ঘরে গেলেন চেকটা আনতে। সাধারণত উনি সারা দিন ল্যাবে থাকতেই ভালো বাসেন। পাশেই আমাদের তৈরি একটা লোহার বাক্স একদম একটা মানুষের অবয়ব। অনেক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম লাগানো ছিল। নিজেদের তৈরি জিনিস টা একবার ভালো করে দেখার ইচ্ছে জাগলো মনে।
মেশিনটা তে ঢুকতেই দরজাটা একাই বন্ধ হয়ে গেল। ভেতরে একটা টিভি স্ক্রিন চালু হয়ে গেল। অনেক রকম গাণিতিক হিসাব দেখাচ্ছিল। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি বেরোবার চেষ্টা করলাম। একটু পরেই দরজাটা খুলে গেল একা একা। বেরিয়ে দেখি আড়াইটা বাজে। আমি খুব বেশি হলে পাঁচ মিনিট ছিলাম ভেতরে। অথচ সেই সকালে এসেছি, একটু অবাক হলাম আমি। বাক্সটাও জং ধরে গেছে দেখলাম। এত তাড়াতাড়ি এসব কিভাবে হলো বুঝে উঠতে পারলাম না। সুজিত বাবুর খোঁজ করলাম। ফোনও করলাম কিন্তু ফোন বন্ধ করা ছিল। অন্ধকার ঘরে নিজেকে ছাড়া কোনো মানুষ কে খুঁজে পেলাম না। একটা চেক চাবিটার নীচে চাপা দেওয়া ছিল। দেখলাম আমাদের কোম্পানির নামেই ইস্যু করা। আমি আর দেরি করলাম না।তাড়াতাড়ি বেরিয়ে চলে এলাম। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। সেই চাবিটা এনে দরজাটা খুললাম। বাড়ির বাইরে টাও যেন কিছুক্ষনের মধ্যেই অন্যরকম হয়ে গেছে। অপরিস্কার যেন দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয়না। কিন্তু সকালে যখন বাড়িতে ঢুকেছিলাম একেবারে ঝকঝকে ছিল বাইরে টা। নীচে রাখা গাড়িটাও যেন দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হইনি। বাইরে থেকে তালা মেরে এসেছি। আমি আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম, এই চাবিটা আর চেকটা নিয়ে। 
মালিক ভদ্রলোক খুব মন দিয়ে শুনছিলেন কথা গুলো। তারপর রমেন বাবুর হাতের থেকে চেকটা নিয়ে বললেন, চেকের তারিখ টা দেখেছেন রমেন বাবু?
হ্যা দেখেছি! সাতাশ দশ দুহাজার সতেরো, আজকের ডেট দেওয়া আছে তো! অসুবিধা নেই কাল ব্যাংকে জমা করে দেবো। 
রমেন বাবু আজ তারিখ কত? একবার মোবাইলে দেখুন তো।
সাতাশ দশ দুহাজার উনিশ? রমেন বাবু হতবাক হয়ে গেলেন। তবে কি হয়েছিল ওই বাক্সের ভেতরে? ওনার মাথার ভেতর সব গুলিয়ে যেতে লাগলো।
পরে থানায় গিয়ে সব জমা করে দিয়ে আসা হয়েছিল। 
কিন্তু সুজিত বাবুর আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। হয়তো কোনো অসীমের যাত্রা করেছেন ভদ্রলোক, নিজের সময় যান নিয়ে।
পুলিশ পরে গিয়ে শুধু লোহার জং ধরা খোলটা ছাড়া আর কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খুঁজে পাননি।

Comments

Popular posts from this blog

#অনুগল্প#মোটিভ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#ছোট_গল্প#বিজানুর_বিষে_নারদ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#অসুখ