#চক্রশ্রেষ্ঠ_ও_সন্ন্যাসী #সৌরভ_কুমার_নাথ

#চক্রশ্রেষ্ঠ_ও_সন্ন্যাসী 
#সৌরভ_কুমার_নাথ

বহুদিন পূর্বের কথা। কাশী রাজ্যের এক অখ্যাত গ্রামে চক্রশ্রেষ্ঠ নামে এক ব্রাহ্মণ সস্ত্রীক বাস করিতেন। গ্রামের শিব মন্দিরে তিনি প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করিতেন। পূজা পদ্ধতিতে কোনো ভুল না থাকিলেও, মন্দিরের অন্যান্য পূজারীদের নিকট চক্রশ্রেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। কারণ একটাই, লোভ! চক্রশ্রেষ্ঠ ভয়ানক লোভী ছিলেন। যজমানকে ভুল বুঝাইয়া ঈশ্বরের নামে তাহার সর্বস্ব লুট করিতেন। সাধারণত দরিদ্র গ্রামবাসীরাই তাহার লোভী ক্ষুধার ভেট চরাইতেন।

একদিন এক সন্ন্যাসী আসিয়া জুটিলেন মন্দিরে। বলিলেন, আমি এই মন্দিরে থাকিতে চাই। ভিক্ষু সন্ন্যাসীর স্নিগ্ধ দৃষ্টি এবং সুমিষ্ট ব্যাবহার সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। সকলের সম্মতিক্রমে সন্ন্যাসী মন্দিরে থাকিবার ব্যবস্থা হইলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চক্রশ্রেষ্ঠ সকলের সহিত রাজি হইলেন। 

মুখে-মুখে সমর্থন করিলেও সন্ন্যাসীর মন্দিরে থাকিবার বিষয় নিয়ে চক্রশ্রেষ্ঠ অন্তরে অন্তরে ঘোট পাকাইতে লাগিলেন। কে তিনি? তাহাকে মন্দির পরিষদেরা খাওয়াইবেন। কেন অন্য পুরোহিতদের নিকট তিনি এতো সম্মান পাইয়া থাকেন।

একদিন মহাদেবের স্বর্ণ-ডমরু গর্ভগৃহ হইতে নিখোঁজ হইল। অনেক অন্বেষণের পর সেই ডমরু সন্ন্যাসীর ভিক্ষার ঝুলি হইতে উদ্ধার হইল। সকলে সন্ন্যাসীকে তস্কর ভাবিলেন এবং তিরস্কার করিতে লাগিলেন। সন্ন্যাসী শান্ত থাকিয়া কহিলেন, আমি এক ভিক্ষু সন্ন্যাসী এই ধরাধামে আমার আপেক্ষিক বস্তুর প্রতি কোনো লোভ, লালসা নাই। আমি সম্পূর্ণ দেশ ঘুরিয়ে বেড়াই যখন মনে হয় কোনো মন্দিরে বা মঠে বিশ্রাম গ্রহণ করি। এই কার্য আমার নয়। কিন্তু চক্রশ্রেষ্ঠ কোনো কথা শুনিলেন না, সন্নাসীকে দুর দুর করিয়া তাড়াইয়া দিলেন।

সন্ন্যাসীর মুখে স্নিগ্ধ হাসি সকলের মননকে অশ্রুসিক্ত করিয়া তুলিল।
সন্ন্যাসী বলিলেন, সুধীবৃন্দ- আপনারা যখন মনে করিতেছেন আমি দোষী, তাহা হইলে আমি এই মন্দির এখনই পরিত্যাগ করিব। তবে যদি কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে এক সন্ন্যাসীকে কলঙ্কিত করেন তাহা হইলে তিনি দণ্ড ভোগ করিবেন এবং সেই দণ্ড স্বয়ং ভগবান দিবেন। সন্ন্যাসী ধীর গতিতে মন্দির হইতে প্রস্থান করিলেন।

সন্ন্যাসীর মন্দির পরিত্যাগের পশ্চাতেই ঝঞ্ঝা শুরু হইল। সেই ঝঞ্ঝা ভয়ঙ্কর, সমস্ত ধরাধাম যেন কাঁপিতে লাগিল। সকলে মহাদেবের মূর্তির সামনে একত্রিত হইয়া ত্রাহি ত্রাহি করিতে লাগিলেন। একমাত্র চক্রশ্রেষ্ঠ নিরালায় বসিয়া কি যেন ভাবিতে লাগিলেন। একসময় ঝঞ্জা সমাপ্ত হইল। কিন্তু চক্রশ্রেষ্ঠের‌ দেহ যেন প্রস্তরে পরিণত হইয়াছে। তিনি যাহাই স্পর্শ করিতেছেন তাহাই প্রস্তরে পর্যবসিত হইতেছে। তিনি প্রসাদ গ্রহণ করিতে গেলেন তাহাও প্রস্তরে পরিণত হইল।

সকলে বুঝিলেন সন্ন্যাসীকে হেনস্থা করিবার দায় কাহার, সকলে তিরস্কার করিতে লাগিলেন। চক্রশ্রেষ্ঠ নিজ কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হইলেন। তিনি কহিলেন আমি সন্ন্যাসীর নিকটে ক্ষমা ভিক্ষা করিব। কিন্তু কোথায় সেই ভিক্ষুক। তাঁহার খোঁজ পাওয়া গেল না। তিনি যেন ভোজবাজির মতন উধাও হইয়াছেন।

চক্রশ্রেষ্ঠ বুঝিলেন তিনি মস্ত ভুল করিয়াছেন এবং তিনি প্রায়শ্চিত্ত করিতে উদ্যত হইলেন। যে হস্তে তিনি এই পাপ কার্য করিয়াছেন সেই হস্ত কাটিতে উদ্যত হইলেন। এমন সময় সেই সৌমকান্তি সন্ন্যাসী, সূর্যের স্বর্ণালী ছটায় উদ্ভাসিত হইয়া আবির্ভুত হইলেন এবং চক্রশ্রেষ্ঠকে নিবৃত্ত করিলেন। চক্রশ্রেষ্ঠ সেই মহাপুরুষের পদযুগল জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। সেই সন্ন্যাসী কহিলেন হে চক্রশ্রেষ্ঠ তুমি এইক্ষণে নিখাদ কাঞ্চন পরিণত হইয়াছো। সেই কাঞ্চন এখন যে কোনো রূপ লইতে পারে। তুমি অন্তর হইতে নির্লোভ হইয়াছো। তুমি অন্তর হইতে তোমার ইষ্টদেবতার পূজা করো, তোমার মনের অশান্তি দূর হইবে। এই বলিয়া সন্ন্যাসী অন্তর্হিত হইলেন। চক্রশ্রেষ্ঠ বুঝিলেন তার মনে ক্লেশ নাই দ্বেষ নাই নাই কোনো লোভ, নির্বিকার সে। ইহার পরেই চক্রশ্রেষ্ঠ সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহন করিলেন এবং সমগ্র জীবকুলের কল্যানে আপন জীবন উৎসর্গ করিলেন।

Comments

Popular posts from this blog

#অনুগল্প#মোটিভ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#ছোট_গল্প#বিজানুর_বিষে_নারদ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#অসুখ