#অদ্ভুত_দেখতে_লোকটা!#সৌরভ_কুমার_নাথ

#অদ্ভুত_দেখতে_লোকটা!
#সৌরভ_কুমার_নাথ

কিছু কিছু ঘটনা বড়ই অদ্ভুত হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই সব ঘটনাকে শুধু বর্ণনা দেওয়া যায়, কিন্তু অর্থ খোঁজা বড়ই কঠিন।
ধানবাদে কাপড়ের ব্যাবসা অমিতের। শান্তিপুর, ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি ওখানকার বড় বড় দোকানে নিজেই পৌঁছে দেয় ও। নিজের পুঁজি তাই ব্যাবসা বেশ বড় হলেও নিজেই পুরোটা সামলায়। কাজের সূত্রে যাতায়াত লেগেই থাকে ওর। যাওয়ার সময় ঠিক থাকলেও ফেরাটা নির্ভর করে ক্লায়েন্ট দের উপর। মাঝে মাঝেই অনেক রাত হয়ে যায় সব সেরে স্টেশনে পৌঁছাতে। সেরকমই ছিল সেই দিনটা।
এক বড় ব্যাবসায়ীর সঙ্গে মিটিং সেরে এবং অন্যান্য সমস্ত কাজ গুটিয়ে যখন অমিত ধানবাদ স্টেশনে পৌঁছালো তখন রাত দেড়টা বেজে গেছে। কোনোমতে স্টেশন থেকে একটা টিকিট কেটে একটা সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়ে অমিত।
এ কাজ সে আগেও করেছে, ট্রেনে উঠে টিটির হাতে কিছু গুঁজে দিলে একটা ভালো সিটের ব্যাবস্থা হয়ে যায়। সমস্যায় যে পড়েনি তা নয়, তবে সেই অনুপাতে খুব কম। এভাবে হলে আর কে রিজার্ভেসনের ঝক্কি নেবে, মনে মনে হাসে অমিত। সেদিনও কাজ হয়ে গেল, মিলেও গেল একটা সিট। একেবারে আপার।
এই একটা বড় সমস্যা অমিতের, যতই জার্নিতে অভ্যস্ত হোক না কেন, রাতে কিছুতেই ঘুম আসেনা ট্রেনে। কিসব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা শুধু ঘুরপাক খায় মাথায়। কখনো মনে হয় ট্রেনটা যদি একসিডেন্ট করে, কি হবে তাহলে? বা যদি কোনো ডাকাত সর্দার হারে রে রে করে বন্দুক ধরে বুকে ইত্যাদি! ইত্যাদি! রাতটা যেন শেষ ই হয়না অমিতের। বাড়িতে ভোরে ঘুম ভাঙলে চোখ খুলে ছটা বাজে দেখার পর সাতটা বাজতে যেমন সময় লাগেনা তেমনি রাত জেগে জেগে শুধু যদি ভোরের অপেক্ষা করা হয় তাহলে রাত শেষ হতে চায় না। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করে টয়লেটের দিকে যায় অমিত। দরজাটা হালকা খুলে সিগারেট টা ধরায় ও। হটাৎ মনে পড়ে যায় রাধিকার কথা, প্রথম প্রেম অমিতের। সেই টানা টানা চোখ, আগুন দৃষ্টি এখনও মনে পড়লে শিহরিত হয় অমিত। হটাৎ ট্রেনের দরজায় একটা লাঠির বাড়ি র আওয়াজ নিমেষে ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। পুলিশ ভেবে ক্ষমা চাইতে যাবে এমন সময় দেখে এক ভিখারী চলন্ত ট্রেনে উঠবে বলে আওয়াজ করছে। 
কি অদ্ভুত দেখতে লোকটা। সমস্ত মুখটা পোড়া পোড়া দাগ, চোখগুলো যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে বাইরে, মাথায় একফোঁটা চুল নেই। হাতে একটা সরু বাঁশের লাঠি, ওটা দিয়েই দরজায় আঘাত করার শব্দ বোধ হয়।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রেমিকার কথা ভাবলে হবে? আমার পেটে চলবে কিভাবে? সাইড দে হতভাগা! ট্রেনটাকে বাবার সম্পত্তি বলে ভেবেছিস? বলে বলে হা হা করে হাসতে থাকে ভিখারী টা। কারণ ছাড়া এতগুলো কথা শুনে রাগ হয় অমিতের। দে! দশটা টাকা দে! অমিত তখন বেশ রেগে আছে। কোনো কথার উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে অমিত। এগুলো পৃথিবীর বোঝা, এগুলোকে ভগবান কেন তুলে নেয় না কে জানে? 
কিরে মৃত্যু কামনা করছিস? শকুনের শাপে গরু মরে নাকি রে? আবার সেই হাসিটা হাসতে থাকে ভিখারী টা। হ্যাঁ আমি শকুন আর আমি তোর মৃত্যু কামনাই করছি। টাকাটা দেব ভাবছিলাম কিন্তু তোকে দেব না। মর গে যা! মনে মনে কথা গুলো ভেবে সিগারেট টা ছুড়ে ফেলে নিজের সিটের দিকে রওনা দেয় অমিত। ট্রেনটা তার নিজস্ব গতিবেগ এগিয়ে চলেছে।
বড্ড ফালতু বকে লোকটা! কিন্তু ও যে কটা কথা বলেছে একটাও মিথ্যে নয়। প্রেমিকার কথা ভাবার ব্যাপার টা কাকতলীয় হলেও, মৃত্যু কামনার ব্যাপার টা? সত্যিই তো মৃত্যু কামনা করেছে।
এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের সিটটায় উঠতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয় অমিতের। এইমাত্র যেই ভিখারী কে গেটের কাছে দেখে এসেছে সে এত তাড়াতাড়ি ওর সিটে উঠে বসলো কি করে? 
এত ভয় পেলি কেন রে? হা:হা:হা: দশটা টাকা দে নেমে যাব, বলে ভিখারী টা। মুখ টা যেন এক জ্যান্ত বিভীষিকা। ওই অন্ধকারে হটাৎ দেখলে অনেকে অজ্ঞান হয়ে যাবে। সিট থেকে নামাতে বেশ বেগ পেতে হল অমিতের, সিট টা একেবারে উপরের বলে কষ্টটা আরো বেশি হয় ।অনেকটা জোর করেই নামানো হয় লোকটাকে। তারপর সিটে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেবে ঠিক করে অমিত। সিটে উঠে চোখটা বন্ধ করে মাথাটাকে একটু ঠান্ডা করার চেষ্টা করে অমিত। হটাৎ চোখ খুলে দেখে, চারিদিকে লোক জন ওকে ঘিরে রেখেছে। ও রেল লাইনে শুয়ে আর লাইনের বাইরের দিকটায় একটা দেহের অর্ধেক অংশ পড়ে আছে। হটাৎ নিজের দিকে চেয়ে আঁতকে ওঠে ওর শরীরের নিচের অংশ নেই। কিন্তু ওর শরীরের পোশাকটা অনেকটা ওই ভিখারী টার মতো। সেই বীভৎসতা বর্ণনা করার মতো নয়। শরীর টা দুটো খণ্ড হলেও কোনো রক্ত নেই। চোখটা বন্ধ করে চিৎকার করে ওঠে অমিত। হটাৎ চোখটা খুলে উঠে অমিত দেখে বাথরুমের পাশে বসে ঘুমাচ্ছিল এতক্ষন, ট্রেনের দরজাটা একটু খোলা আছে যেমনটা ও সিগারেট খাওয়ার জন্য খুলেছিল। উঠতে গিয়ে বুঝতে পারে একটু কষ্ট হচ্ছে যেন, হাতের পাশে একটা বাঁশের লাঠি পড়ে আছে, লাঠিটা তে ভর দিয়ে উঠে হটাৎ বেসিনের কাঁচের দিকে মুখ যেতেই বিস্ময়ে ফেটে পড়ে ও। একি! পোশাকটা ওর ই বটে তবে ওর মুখটা অবিকল সেই ভিখারি টার মত।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা ও। ঘুমটা ভেঙে যায় একটা চিৎকার চেঁচামেচিতে। কি হচ্ছে এসব ?কোনটা ঘুম কোনটা স্বপ্ন কিছুই বুঝতে পারছেনা অমিত।একটু ধাতস্থ হয়ে কি হয়েছে দেখার জন্যে উঁকি দেয় অমিত। একটা ভিখারী কাটা পড়েছে। অমিত তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে ট্রেন থেকে নেমে যেখানে লোকের ভিড় সেই দিকটায় যায়। সেকি এতো বরাকর! আমি তো দু ঘন্টা আগেই পার হয়ে এসেছি। ভাবতে ভাবতে পা চালায় অমিত। একটা দেহ কেটে দু টুকরো হয়ে আছে। মুখের কাছটায় গিয়ে অমিত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়, এতো সেই ভিখারী। যার সাথে বরাকর স্টেশনে দেখা হয়েছিল! যেন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সেই ভয়ঙ্কর হাসিটা দিচ্ছে। লাঠিটাও একই রকম। মনে হয় চলতি অবস্থায় উঠতে গিয়ে এই হাল, বলছে লোকজন। লোকটার হাতে কিছু একটা মুঠো করা আছে, দেখে মনে হচ্ছে একটা নতুন দশ টাকার নোট। 
তাড়াতাড়ি মানিব্যাগটা হাতড়ে বার করলো অমিত। মানিব্যাগে নতুন দশ টাকার নোট একটাই ছিল, সেটা এখন সেখানে নেই। অন্য কোথাও খরচা ও করার সুযোগ ছিলনা এত রাতে। এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে অমিত বুঝে উঠতে পারছে না যে ও কি আদৌ জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। ও যেন স্বপ্নের মধ্যেই হারিয়ে গেছে। বাস্তব আর স্বপ্নের পার্থক্যটাও কিন্তু বোঝা খুব কঠিন। আপনারা কি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন?আমি বুঝে উঠতে পারিনি আপনারা যদি বুঝে থাকেন তবে জানাবেন।

Comments

Popular posts from this blog

#অনুগল্প#মোটিভ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#ছোট_গল্প#বিজানুর_বিষে_নারদ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#অসুখ