#ছোট_গল্প#বিজানুর_বিষে_নারদ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#ছোট_গল্প
#বিজানুর_বিষে_নারদ
#সৌরভ_কুমার_নাথ

সমগ্র দেশ করোনা বিজানুর কারণে লক ডাউন চলছে। মানুষেরা সব ঘরের ভেতরে। সবচাইতে সমস্যায় পড়েছেন নারদ মশাই। দেবদূত হিসাবে ওনার একটা বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়, তা হল সংবাদ সংগ্রহ বা মানুষ ও দেবতাদের তথ্যের আদান প্রদান করা।সাংবাদিক ভাইয়াদের মতো কাছে তো আই কার্ড নেই তাই কিভাবে ভগবানের নাম প্রচার তাই নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন ভদ্রলোক। এমন সময় নারায়ণ পত্নী কে নিজের অবস্থার কথা জানালেন নারদ মশাই। মাতা এমত অবস্থায় কি করা যায়?
আমি আর কি বলি বলুন তো। আপনি একবার ওনার সাথে কথা বলুন।
নারায়ণ! নারায়ণ! 
প্রভু এখন আমি কি করি লক ডাউন নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি। সে সেদিন নারায়নপুর গ্রামে গেছিলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছি হটাৎ দেখি নীল জামা পড়া একটি ছেলে কাপড়ে মুখ বাধা। বললে কি দাদু এসব ফেন্সি ড্রেস কম্পিটিশন টন আছে নাকি? এই সময় লোকে ঘরে বসে আছে আপনি সেজেগুজে কোথায় চললেন? আর সাজটাও হয়েছে একেবারে ব্যান্ড পার্টির মতো। বাড়ি যান তাড়াতাড়ি।
আমি বললাম বাবা কিছু মনে কোরোনা আমি একটু মন্দিরের পুরোহিত মশাইয়ের সাথে কথা বলবো। 
আবার এসব কোরোনা টোরোনা কেন? আর পুরুত মশাই কে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পূজা বন্ধ আছে। লক ডাউন উঠলে আসবেন। এখন যান দেখি। পাতলা হন তাড়াতাড়ি।
আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, আমি নারদ। ভগবানের তথ্য আদানপ্রদান ই আমার কাজ। তাতে ছেলেটি বললো আপনার টা কি ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট নাকি এসেনশিয়াল? 
আমি উত্তর দিতে পারিনি! পরে বললে ওসব মুখে বলে লাভ নেই দাদু আপনি অথরিটির লেটার লাগবে। যান আগে কাগজ নিয়ে আসুন। আমি আবার বলতে যাচ্ছিলাম, একেবারে লাঠি উচিয়ে তেড়ে এলো। বললো বয়স্ক মানুষ বলে ছেড়ে দিলাম নয়তো পোঁ.....
না ভগবান ওটা আপনাকে বলা যাবেনা। 
নারায়ণ! নারায়ণ!
তা আপনি এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন বিশ্রাম নিন কিছুদিন। 
না ভগবান আপনি সিল ছাপড়া দিয়ে একটা অথরাইসইড লেটার বানিয়েই দিন। ওটা নিয়েই যাবো নয়তো এই নীল জামা পড়া ছেলে গুলো খুব সক্রিয়। আমার তো ছবি তুলে নিয়েছে ওদের মোবাইলে। বলেছে এই ছবিটা ওদের বন্ধু দের কাছে পাঠিয়ে দেবে, কেউ যদি আপনাকে বাইরে দেখে তাহলে সত্যি সত্যি পোঁ.... থাক আর বললাম না। আমি আবার একবার ছবিটা দেখতে চেয়েছিলাম। সেই কবে দেবলোকের আর্টিস্ট কে দিয়ে একটা রংছবি করা হয়েছিল, অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। ও দেখতে গিয়ে আমাকে একটা সুন্দরী উর্বশির ছবি দেখালো, কিন্তু খুব গরিব। একেবারে জামা কাপড় নেই বললেই চলে। তার পরে বুঝতে পারলো ভুল হয়ে গেছে, ভুল করে অন্য ছবি দেখিয়ে ফেলেছে। যাক তারপর আমার ছবিটা দেখালো, সত্যি খুব সুন্দর লাগছিল। আমাকে বললো দাদু আপনার ব্লুটুথ টা অন করুন দিয়ে দিচ্ছি।
আমি বললাম কি বললে বাবা?
ছেলেটা বললো মোবাইল নেই?
বললাম আমাদের মোবাইল লাগেনা বাবা আমার, সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি। 
বললো এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে দাদু। তা যদি সরাসরি যোগাযোগ হয়ে যায় তাহলে এখানে আসার কি দরকার? 
সত্যি প্রভু খুব কঠিন প্রশ্ন। এর উত্তর আমি বোঝাতে গেলে ওর লাঠির ঠেলা আমার বুঝতে হত।
নারায়ণ! নারায়ণ! কিছু তো ব্যাবস্থা করুন প্রভু।
ঠিক আছে কাল যখন যাবে আমার একটা মার্সিডিজ বেঞ্চ নিয়ে যাবে আর ড্রেস টা চেঞ্জ করবে সুট টাই পড়বে। তোমায় বাধা দেবেনা।
সত্যি প্রভু আপনি মহান, আজ গাড়ি নিয়ে গেলাম। কেউ কিছু জিজ্ঞেসা করা তো দূরে থাক। সবাই সেলুট করল। 
তাহলে কি বুঝলে নারদ?
বুঝলাম বাহ্যিক আড়ম্বর টাই সবকিছু। অন্তঃসারহীন আড়ম্বরে মানুষ বেশি মোহিত। ভগবান মানেই পয়সা।
সত্য বচন নারদ। তবে মানুষদের জন্যে আজ তোমাকেও, নিজেকে পরিবর্তন করতে হোল।
তবে ভেতর থেকে পরিবর্তিত হয়ে যেওনা যেন।

Comments

Popular posts from this blog

#অনুগল্প#মোটিভ#সৌরভ_কুমার_নাথ

#অসুখ