tag:blogger.com,1999:blog-79585434539444279202023-11-15T20:21:38.016+05:30SAURAV#stories #poemssauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.comBlogger16125tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-45790686463058231952020-08-18T13:10:00.001+05:302020-08-18T13:10:21.720+05:30#ঘুণ ধরা সুর<div>#ঘুণ ধরা সুর</div><div>#সৌরভ</div><div><br></div><div>ঘুণ ধরা বাঁশিটা পরে আছে পাশে। এই বাঁশিতে যে জাদু আছে! বারে বারে এসেছ সেই বাঁশির সুরে মোহিত হয়ে। আজ পুরোনো হয়েছে, তাই বোধহয় জাদু কমেছে তার। </div><div>কালো সেই ঈশান কোনে ঘন অন্ধকারে তোমার সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন চক্ষু যুগোল। বাঁশির করুন সুরে তোমার চোখের কোনে যে মুক্তের মতন ঝরে পড়া অশ্রুবিন্দু। আমায় পাগল করেছে। সেই ভালবাসা মনের কোণে সাজিয়ে রাখা আছে। ঝরে পরা তারা আর বৃষ্টির মাঝে তোমার মনের অনুভূতিটাকে চুরি করে, জোছনার আলোতে ধরা পরে গেছি। এখন শুধু ভালোবাসা টাকে ভালো বাসা করে নিতে গিয়ে অন্তবিহীন পথ ধরেছি। সেই পথের সীমারেখা অতিক্রম করতে গিয়ে যীশুর সাথে কথা হয়েছে সামনা সামনি। রাস্তার পাশে পরে থাকা সেই ঘেও রুগীটা, যাকে দেখে সবাই দুর্গন্ধ্যে দূর দিয়ে গেছে, তাকে জড়িয়ে ধরে আশ্বাস দিয়েছি ভালোবাসার। স্বপ্নের সমারোহে আমার ছোট্ট একটি ভালোবাসা, তার দাম কি আর হবে?</div><div>ললিতা, বিশখা আর যারা তোমার সখী তোমায় সঙ্গ দিয়েছে, দুষেছে আমায় বদনাম করেছে, </div><div>বলেছে "তোমার বাঁশিতে জাদু আছে তুমি মন্তর করেছ আমার সখিকে"। জানিনা কি জাদু আছে বাঁশিতে, তবে তোমার চোখের গহীন অন্দরে কোথায় যেন জাদু আছে। কাল কাল করে কালের আঁধারে এভাবেই বুঝি শেষ হবে আমার সুপ্ত বাসনা। সরস্বতীর মতন কোথাও উধাও হবো কঠিন বাসনা মনে নিয়ে কোনো মরু পাহাড়ের গভীরে। ঝিলিমিলি রাতের আধারে তোমায় দেখবো লুকিয়ে, আর বাঁশি বাজবে সেই অচেনা অজানা আধারে আর তুমি পাগল হবে বিষ ভরা ওই বাঁশির সুরে!!</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-24215844777601609192020-05-01T16:30:00.001+05:302020-05-01T16:30:25.449+05:30দুধেল গাই<div>#দুধেল_গাই</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>গোয়ালেরা আজ ধর্ণায় সব, দুধ দোয়াবেনা আর।</div><div>লাগলে লাথি পশ্চাতেতে, হজম করা ভার।</div><div>ভোট পুকুর নাইতে নেমে সাঁতার কাটা দায়।</div><div>দুধেল গাইয়ের লাথি খেয়ে পরান বুঝি যায়।</div><div>এই গরুর দুধ ভালো খেতে বড়োই সাধ।</div><div>খিলখিলিয়ে উঠলো গরু, ভেঙে সকল বাঁধ।</div><div>খিস্তি খাস্তা হজম করে দুধ দোয়ানো চাপ।</div><div>কাজ করতে যাওয়া তো নয়, কন্যা দায়ে বাপ।</div><div>গরুর আমি গরুর তুমি গরুর শিঙের ফের।</div><div>শিঙ বুঝে তাই চলতে হবে, অভিজ্ঞতা চাই ঢের।</div><div>মুখে মুখে চলতে পারে, দাঁড়িয়ে গালি খান।</div><div>গুঁতোতে যদি চলে আসে সোজা পালিয়ে যান।</div><div>এমন ভাবেই চলবে বুঝি আমার দেশের কাজ।</div><div>গরুর দালাল গুলোর মাথায়, পড়েনা কেন বাঁজ</div><div>মাথা যারা, প্রয়োজনীয় নির্দেশ গুলো দিক।</div><div>দুস্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল আমার মতে ঠিক।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-38840929198085797932020-04-28T01:35:00.001+05:302020-04-28T01:35:52.635+05:30#চক্রশ্রেষ্ঠ_ও_সন্ন্যাসী #সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#চক্রশ্রেষ্ঠ_ও_সন্ন্যাসী </div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>বহুদিন পূর্বের কথা। কাশী রাজ্যের এক অখ্যাত গ্রামে চক্রশ্রেষ্ঠ নামে এক ব্রাহ্মণ সস্ত্রীক বাস করিতেন। গ্রামের শিব মন্দিরে তিনি প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করিতেন। পূজা পদ্ধতিতে কোনো ভুল না থাকিলেও, মন্দিরের অন্যান্য পূজারীদের নিকট চক্রশ্রেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। কারণ একটাই, লোভ! চক্রশ্রেষ্ঠ ভয়ানক লোভী ছিলেন। যজমানকে ভুল বুঝাইয়া ঈশ্বরের নামে তাহার সর্বস্ব লুট করিতেন। সাধারণত দরিদ্র গ্রামবাসীরাই তাহার লোভী ক্ষুধার ভেট চরাইতেন।</div><div><br></div><div>একদিন এক সন্ন্যাসী আসিয়া জুটিলেন মন্দিরে। বলিলেন, আমি এই মন্দিরে থাকিতে চাই। ভিক্ষু সন্ন্যাসীর স্নিগ্ধ দৃষ্টি এবং সুমিষ্ট ব্যাবহার সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল। সকলের সম্মতিক্রমে সন্ন্যাসী মন্দিরে থাকিবার ব্যবস্থা হইলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চক্রশ্রেষ্ঠ সকলের সহিত রাজি হইলেন। </div><div><br></div><div>মুখে-মুখে সমর্থন করিলেও সন্ন্যাসীর মন্দিরে থাকিবার বিষয় নিয়ে চক্রশ্রেষ্ঠ অন্তরে অন্তরে ঘোট পাকাইতে লাগিলেন। কে তিনি? তাহাকে মন্দির পরিষদেরা খাওয়াইবেন। কেন অন্য পুরোহিতদের নিকট তিনি এতো সম্মান পাইয়া থাকেন।</div><div><br></div><div>একদিন মহাদেবের স্বর্ণ-ডমরু গর্ভগৃহ হইতে নিখোঁজ হইল। অনেক অন্বেষণের পর সেই ডমরু সন্ন্যাসীর ভিক্ষার ঝুলি হইতে উদ্ধার হইল। সকলে সন্ন্যাসীকে তস্কর ভাবিলেন এবং তিরস্কার করিতে লাগিলেন। সন্ন্যাসী শান্ত থাকিয়া কহিলেন, আমি এক ভিক্ষু সন্ন্যাসী এই ধরাধামে আমার আপেক্ষিক বস্তুর প্রতি কোনো লোভ, লালসা নাই। আমি সম্পূর্ণ দেশ ঘুরিয়ে বেড়াই যখন মনে হয় কোনো মন্দিরে বা মঠে বিশ্রাম গ্রহণ করি। এই কার্য আমার নয়। কিন্তু চক্রশ্রেষ্ঠ কোনো কথা শুনিলেন না, সন্নাসীকে দুর দুর করিয়া তাড়াইয়া দিলেন।</div><div><br></div><div>সন্ন্যাসীর মুখে স্নিগ্ধ হাসি সকলের মননকে অশ্রুসিক্ত করিয়া তুলিল।</div><div>সন্ন্যাসী বলিলেন, সুধীবৃন্দ- আপনারা যখন মনে করিতেছেন আমি দোষী, তাহা হইলে আমি এই মন্দির এখনই পরিত্যাগ করিব। তবে যদি কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে এক সন্ন্যাসীকে কলঙ্কিত করেন তাহা হইলে তিনি দণ্ড ভোগ করিবেন এবং সেই দণ্ড স্বয়ং ভগবান দিবেন। সন্ন্যাসী ধীর গতিতে মন্দির হইতে প্রস্থান করিলেন।</div><div><br></div><div>সন্ন্যাসীর মন্দির পরিত্যাগের পশ্চাতেই ঝঞ্ঝা শুরু হইল। সেই ঝঞ্ঝা ভয়ঙ্কর, সমস্ত ধরাধাম যেন কাঁপিতে লাগিল। সকলে মহাদেবের মূর্তির সামনে একত্রিত হইয়া ত্রাহি ত্রাহি করিতে লাগিলেন। একমাত্র চক্রশ্রেষ্ঠ নিরালায় বসিয়া কি যেন ভাবিতে লাগিলেন। একসময় ঝঞ্জা সমাপ্ত হইল। কিন্তু চক্রশ্রেষ্ঠের দেহ যেন প্রস্তরে পরিণত হইয়াছে। তিনি যাহাই স্পর্শ করিতেছেন তাহাই প্রস্তরে পর্যবসিত হইতেছে। তিনি প্রসাদ গ্রহণ করিতে গেলেন তাহাও প্রস্তরে পরিণত হইল।</div><div><br></div><div>সকলে বুঝিলেন সন্ন্যাসীকে হেনস্থা করিবার দায় কাহার, সকলে তিরস্কার করিতে লাগিলেন। চক্রশ্রেষ্ঠ নিজ কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হইলেন। তিনি কহিলেন আমি সন্ন্যাসীর নিকটে ক্ষমা ভিক্ষা করিব। কিন্তু কোথায় সেই ভিক্ষুক। তাঁহার খোঁজ পাওয়া গেল না। তিনি যেন ভোজবাজির মতন উধাও হইয়াছেন।</div><div><br></div><div>চক্রশ্রেষ্ঠ বুঝিলেন তিনি মস্ত ভুল করিয়াছেন এবং তিনি প্রায়শ্চিত্ত করিতে উদ্যত হইলেন। যে হস্তে তিনি এই পাপ কার্য করিয়াছেন সেই হস্ত কাটিতে উদ্যত হইলেন। এমন সময় সেই সৌমকান্তি সন্ন্যাসী, সূর্যের স্বর্ণালী ছটায় উদ্ভাসিত হইয়া আবির্ভুত হইলেন এবং চক্রশ্রেষ্ঠকে নিবৃত্ত করিলেন। চক্রশ্রেষ্ঠ সেই মহাপুরুষের পদযুগল জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। সেই সন্ন্যাসী কহিলেন হে চক্রশ্রেষ্ঠ তুমি এইক্ষণে নিখাদ কাঞ্চন পরিণত হইয়াছো। সেই কাঞ্চন এখন যে কোনো রূপ লইতে পারে। তুমি অন্তর হইতে নির্লোভ হইয়াছো। তুমি অন্তর হইতে তোমার ইষ্টদেবতার পূজা করো, তোমার মনের অশান্তি দূর হইবে। এই বলিয়া সন্ন্যাসী অন্তর্হিত হইলেন। চক্রশ্রেষ্ঠ বুঝিলেন তার মনে ক্লেশ নাই দ্বেষ নাই নাই কোনো লোভ, নির্বিকার সে। ইহার পরেই চক্রশ্রেষ্ঠ সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহন করিলেন এবং সমগ্র জীবকুলের কল্যানে আপন জীবন উৎসর্গ করিলেন।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-8334916892736957862020-04-28T01:34:00.001+05:302020-04-28T01:34:02.942+05:30#অলৌকিক_অতিলৌকিক#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>|| ভৌতিক | ছোটগল্প ||</div><div>#অলৌকিক_অতিলৌকিক</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>রিঙ্কি এখন হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে মাস্টার্স করছে। ভুতের বই পড়ার শখটা বরাবরই ছিল, এখন মাত্রা ছাড়িয়েছে। সেই ক্লাস ফাইভে থাকতে টুকটুকি মাসি জন্মদিনে একটা ভূতের গল্পের বই গিফ্ট করেছিল, কিন্তু তার প্রভাব যে এত সুদূরপ্রসারী হবে, কস্মিনকালেও সেকথা ভাবতে পারিনি রিঙ্কির মা। এখনো ছোট বোনকে ফোনে গাল দিতে একটুও কসুর করে না; তোর জন্যে মেয়েটার এই দশা! বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড ঘুরে ভূত খুঁজে চলেছে। রিঙ্কি এখন "গোস্ট আট মোস্ট" নামের একটি গ্রূপের সদস্য। ভূতের খবর পেলে সেখানে তার যাওয়া চাই-ই-চাই।</div><div>এইতো বছর খানের আগের ঘটনা, সামিলপুর নামে পুরুলিয়ার একটা অখ্যাত গ্রামে নাকি কাকে ভূতে পেয়েছে, মেয়ে দলবল নিয়ে সেখানে হাজির। সব দেখে শুনে বুঝলো যাকে ভূতে পেয়েছে বলে রটানো হয়েছে, ভদ্রলোক স্কিটজোফ্রেনিয়ার রুগী। এই কথা বলাতে পাড়ার লোকজন তো তাদের এই মারে কি সেই মারে! কোনো মতে আদ্রা স্টেশনে পৌঁছে রাতের ট্রেন ধরে বাড়ি। গত সেমের আগে হঠাৎ করে খবর এলো কলকাতার একটা বনেদী বাড়িতে নাকি ভূতের উপদ্রব হয়েছে, সেখানেও বিন বুলায়া মেহেমানেরা হাজির। বাড়িতে বয়স্ক দুই বুড়ো বুড়িকে ভয় দেখিয়ের বাড়ি হাতানোর তালে ছিল প্রমোটার, সব কারসাজি ধরা পড়লো। কোন খামচি থেকে লাউড স্পিকার, প্রজেক্টর এসব ধরা পড়লো। ভদ্রলোকের ছেলে মেয়েরা সব বিদেশে থাকে। সে সব ধরপাকড়ের পর ফোনে থ্রেটও খেতে হয়েছে রিঙ্কিদের। তবে ওদের বন্ধু অনির্বানের বাবা পুলিশের একটি বড় পদে আছেন বলে বিভিন্ন সময় তিনিই এইসব ছেলে মেয়ে গুলোকে সামলেছেন।</div><div>সুজিত এর বাড়ি করিমপুর, নদীয়া জেলার মধ্যে হলেও তুলনামূলক মুর্শিদাবাদের কাছে এবং নদীয়া-মুর্শিদাবাদের সংযোগস্থলে বলা যেতে পারে। গ্রূপের সিনিয়র সদস্য, তার বিয়ে। কাজের সূত্রে বাগুইহাটিতে থাকলেও বিয়েটা বাড়ি থেকেই করছে। গ্রূপের সবার নিমন্ত্রণ, রবিবার বিয়ে, মঙ্গলবার রিসেপশন। সুজিত ব্যারাকপুর এ বিয়ে করেছে সুতরাং বিয়েতে যাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই কিন্তু বৌভাতে যাওয়া কিভাবে হবে তাই নিয়ে শুরু হলো আলোচনা। শেষে ঠিক হলো প্রথমে ট্রেনে তারপর একটা গাড়ি ভাড়া করে সুজিতের বাড়িতে যাওয়া হবে। কৃষ্ণনগর সদর শহর হলেও করিমপুর রাস্তার হিসাবে প্রায় ঘন্টা দুয়েকের পথ, পরিবেশ বেশ গ্রাম্য তার মাঝে আবার কিছু ফাঁকা জায়গা আছে, আর আছে কিছু বনাঞ্চল। সব ঠিক করে প্ল্যানিং করার পরেও শেষে শ্যামলের ঠাকুমা অসুস্থ হয়ে পড়ায় শেষ মুহূর্তে স্বপন আর রিঙ্কি বিয়েবাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল। ফেরার তাড়া ছিলো না, কারণ সুজিত ওদের জন্যে থাকার ব্যবস্থা করেছিল।</div><div>ওদের দুপুরের পর পরই পৌঁছানোর কথা কিন্তু শিমুরালিতে ট্রেনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় প্রায় দু'ঘন্টা লেট হয়ে গেল। ওরা যখন কৃষ্ণনগর পৌছালো তখন প্রায় সাতটা বেজে গেছে। ওদের জন্যে একটা সাদা অ্যম্বাসেডার দাঁড়িয়ে ছিল। ফোনে সুজিতকে জানিয়ে দিয়ে ওরা দু'জন রওনা দিলো বিয়ে বাড়ির উদ্দেশে।</div><div><br></div><div>তেহট্ট ছাড়ার পর থেকেই গাড়িটার কিছু সমস্যা হচ্ছিল, মেইন রোড থেকে একটা ছোট কাঁকুড়ে রাস্তা ধরার পরেই গাড়িটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। ড্রাইভার নেমে অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু কিছু বুঝতে না পেরে বললেন সামনেই একজন মেকানিক থাকে, ওর বাড়িটা আধঘন্টার রাস্তা। আপনারা গাড়িতে বসবেন, বেরোবেন না। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরবো। সুজিতটা একটা দায়িত্ব দিয়েছিল সেটাও ঠিক করে করতে পারলাম না। এমন জায়গায়ই গাড়িটা খারাপ হতে হলো। সুজিত আমার দূর সম্পর্কের ভাগ্নে। ওরা একটু লজ্জা পেল কারণ শুধু একজন ড্রাইভার ভেবে অনেক কিছু বলে ফেলেছে ততক্ষণ। মামা বাবু বলে ক্ষমাও চেয়ে নিল ওরা। </div><div>ভদ্রলোক একটা কথা বার বার বলছিলেন, তোমরা বাবা গাড়ি থেকে নেমনা কিন্তু।</div><div>"এমন জায়গায় গাড়িটা খারাপ হতে হল" এই কথাটা যেন খুব কানে বাধলো রিঙ্কির। হঠাৎ এ কথা বললেন কেন মামা বাবু? এখানে কি ডাকাতি হয়? নাকি অন্য কিছু? এসব কথা ঘুরপাক খেতে লাগলো ওদের মাথায়। </div><div><br></div><div>গাড়িটা সুন্দর করে সাজানো, রাম, সীতা, হমুমন, শ্রীকৃষ্ণ কে নেই গাড়িতে। সিটগুলো পুরোনো হলেও খুব ভালো করে মেইনটেইন করা। সিটগুলোর উপরে দামি তোয়ালে আটকানো। মামা বাবু ভদ্রলোক বেশ সৌখিন, কি বলিস রিঙ্কি? হ্যাঁ, দেখে তো তাই মনে হচ্ছে - বললো রিঙ্কি।</div><div><br></div><div>কিন্তু আমরা তো গাড়িতে বসে থাকব না। আমরা জায়গাটা এক্সপ্লোর করবো, মনে রাখতে হবে আমরা "গোস্ট আট মোস্ট"এর সদস্য, হাহাহা!! বললো স্বপন। দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে পায়চারি করতে লাগলো। একটু বুক ভরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিয়ে নে এরকম অক্সিজেন তোদের ওই মানিকতলায় পাবি না - বললো রিঙ্কি। স্বপনের বাড়ি মানিকতলায়, ছোটবেলায় কোনোদিন বুঝতেই পারেনি আকাশটা চৌকো নয়। আকাশের একটা অন্য ডেফিনেশন আছে। ওদের ফ্ল্যাটটার চারিদিকে বড় বড় আকাশচুম্বী বাড়ি।</div><div>পাশেই একটা পুকুর আছে, দূরে একটা বাড়িও আছে সামনে, চাঁদের আলোতে বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে বললো রিঙ্কি। স্বপন যেন সম্বিৎ ফিরে পেল, সেই চৌকো আকাশটায় আটকে ছিল এতক্ষন। এই সময় একটা ভূত এলে বেশ ভালো হয়, কি বলিস স্বপন? বলে রিঙ্কি।</div><div><br></div><div>তাহলে আর কি ভূতের রাজাকে বর না দিয়ে যেতে দেব ভেবেছিস? বলে স্বপন।</div><div>হঠাৎ একটা গাড়ির আওয়াজ পায় দুজনে, ঘুরে দেখে একটা পুরোনো ভিনটেজ গাড়ি আসছে রাস্তা দিয়ে, কিন্তু আলো নেই। রোলস রোয়স ফ্যান্টম টু বললো রিঙ্কি। এটাও ওর একটা ঝোঁক পুরোনো ভিনটেজ গাড়ির ছবি কালেকশন আর যাবতীয় খবর। দেওঘরে দেখেছিলাম অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমে। এই মডেলটা শুধু তিনশোটা ইউনিট বেরিয়েছিল, যার গাড়ি বেশ বড়লোক হবে কারণ এর দাম এখন কোটিতে।</div><div><br></div><div>গাড়িটাকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করালো ওরা। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে হকচকিয়ে গেল ওরা। ড্রাইভিং সিটটা উল্টো দিকে, আসলে এই গাড়ি গুলো লেফট হ্যান্ড ড্রাইভিং করার জন্য। ড্রাইভার ভদ্রলোক অসম্ভব অভদ্র। কথা বলার জন্য কাঁচটাও নামাচ্ছে না। ওরা জিজ্ঞেস করলো দাদা এখানে বিশ্রাম নেবার একটা জায়গা পাওয়া যাবে আসে পাশে? ভেতর থেকে আওয়াজ এলো আমার বাড়িতে বিশ্রাম নিতে পারেন, ওই সামনে আমায় বাড়ি। গলাটা শুনে কেমন যেন গা ছমছম করে উঠলো ওদের! এত কর্কশ গলা ওরা জন্মাবধি শোনেনি। মামাবাবুর ফোনটাও লাগছে না। যাই হোক দুজনে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ির ভেতরটা ভয়ঙ্কর অন্ধকার! আর কেমন যেন ঠান্ডা আর স্যাঁতসেঁতে একটা পরিবেশ।</div><div><br></div><div>গাড়িটা গিয়ে দাঁড়ালো একটা বাড়ির সামনে, অনেক পুরোনো একটা জমিদার বাড়ির মতোই দেখতে। সেই পুরোনো দিনের লণ্ঠন জ্বলছে বটে তবে আলো খুব কম। এই স্মার্টফোনের যুগে এরকম একটা বাড়ি ঠিক সহজ ভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। এ যেন এক আলো-আঁধারী খেলা, সবই দেখা যাচ্ছে কিন্তু মানুষগুলোকে আলাদা করে চেনা যায় না। কেমন যেন অদ্ভুতভাবে দুশো বছর পেছনে চলে গেছি। বাড়িটায় যে জায়গাটায় আমাদের বসতে দিল সেটাকে বৈঠক খানা বলা চলে। বিরাট বড় একটা ঝাড়বাতি ঝুলছে কিন্তু আলো অত্যন্ত কম। ছাদটা অনেক উঁচু সাধারণত পুরোনো বাড়ি গুলো যেমন হয়। দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা প্রস্তুতি চলছে। বড় কোনো ভোজের প্রস্তুতি হবে।</div><div>হঠাৎ একটা হুলুস্থূল পড়ে গেলো পুরো বাড়ি ময়। মহিলারা চিৎকার করতে লাগলো, কিছু মানুষ ঢাল বল্লম হাতে মূল ফটকের দিকে এগিয়ে গেল, কেমন একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। ওরা খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো, এগিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখতে লাগলো, কি হচ্ছে এসব? বাইরে থেকে কারা যেন গুলি চালাতে লাগলো, চোখের সামনে মানুষ মরতে লাগলো। সে এক বীভৎস পরিবেশ। ঘটনার আকস্মিকতায় ওদের কোনো কিছু করার ক্ষমতা ছিলোনা শুধু দেখতে থাকলো। মহিলা, শিশু কেউ বাঁচলো না। সবাইকে হত্যাকারীরা হত্যা করলো। তারপর দেহগুলো নিয়ে কি বীভৎস উৎসব শুরু করলো। শেষে এক বৃদ্ধকে এনে দালান মন্দিরে হাঁড়ি কাঠে বলি দিল। সেই দৃশ্য দেখার নয়!</div><div>দুজনের চোখ বুঝে এলো।</div><div><br></div><div>হঠাৎ মামাবাবুর ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেল। দুজনেই গাড়ির মধ্যে অঘোরে ঘুমাচ্ছে তখন। ঘুমটা ভেঙে বিস্ময়ে ফেটে পড়লো ওরা। কি হল ব্যাপারটা। ওদের পরিবর্তন লক্ষ্য করে আর কিছু বললেন না মামাবাবু। ওরা দেখলো একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ওদের গাড়িটার সামনে। মামাবাবু বললেন এই গাড়ি আজ আর ঠিক হবেনা, কাল মিস্ত্রি আসবে। তোমরা ওই জিপটায় একটু কষ্ট করে চলে যাও, আমি কাল গাড়ি ঠিক করে তোমাদের সাথে দেখা করবো।</div><div><br></div><div>বিয়ে বাড়িটা সেই ভাবে কাটেনি ওদের, রাতে ভালো ঘুম ও হলনা। পরের দিন সকালে সুজিত জিজ্ঞেস করলো কি হলো রে তোদের? চিয়ার আপ গাইস!! দুজনেই একটু হেসে বললো ও কিছুনা আসলে এতটা দূরের জার্নি তো!</div><div><br></div><div>মামা বাবু ফিরলেন যখন তখন প্রায় বেলা বারোটা বেজে গেছে। ওদের স্টেশন পৌঁছে দিতে হবে, নয়তো ওদের ফিরতে দেরি হয়ে যাবে বললো সুজিত। দুটো নাগাদ রেডি হয়ে বেরোলো ওরা, রাস্তায় আর কোনো কথা হয়নি ওদের। শিয়ালদা যখন পৌঁছালো ওরা রাত সাড়ে আটটা বেজে গেছে। দুজনেই ক্যাব নিয়ে বাড়িতে ফিরলো। তবে ওদের ঘোর কাটতে আরো দুদিন লাগলো। হঠাৎ মাথায় একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল রিঙ্কির। লাইব্রেরিতে গিয়ে কিছু ইতিহাসের বই উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলো।</div><div><br></div><div>আজ স্বপনকে আর সুজিতকে বাড়িতে ডেকেছে রিঙ্কি, সাথে সুজিতের নববিবাহিতা স্ত্রী। সেদিনের পুরো ঘটনাটা আদ্যপ্রান্ত বলে রিঙ্কি, সবাই হাঁ করে শুনে চলেছে। সেদিনের ঘটনাটা ঘটার পরে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। দুজনে একই স্বপ্ন কিভাবে দেখলাম, সেই ঘটনাটা অবশ্যই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, কিন্তু কিভাবে? গুগলে সার্চ করতে গিয়ে হঠাৎ একটা ঘটনা আবিষ্কার করলাম। তারপর ইতিহাসটা যাচাই করলাম।</div><div>ঘটনার সূত্রপাত উনিশশো উনিশ, অবিভক্ত বাংলার এক জমিদার, শ্রী প্রতাপাদিত্য মহলদার, যেমন বড় তার জমিদারি, তেমন প্রতিপত্তি।</div><div><br></div><div>তার দান-ধ্যান, তার মানুষের প্রতি ব্যাবহার, আশেপাশের সমস্ত জমিদারদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রজারা খুব খুশি ছিল, আশেপাশের জমিদারি থেকে মানুষ আসতে শুরু করে। জমিদারবাবু তাদের জমি দান করে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন। একসময় সব জমিদারেরা মিলে গোপন অভিসন্ধি করে। সেই দিনটা ছিল জমিদার বাবুর দ্বিতীয় পুত্র শ্রীমান বিক্রমাদিত্য মহলদারের বিয়ের দিন। কোনোদিন কোনো সাহায্য প্রার্থীকে খালি হাতে ফেরাননি জমিদারবাবু। কিন্তু সেইদিন ডাকাতরা ছদ্মবেশে এসে পুরো পরিবারটাকে শেষ করে দেয়। ছোট ছোট বাচ্চা, মহিলাদেরও হত্যা করা হয়। জমিদারবাবুকে টেনে এনে হাঁড়ি কাঠে বলি দেওয়া হয়।</div><div><br></div><div>পুরো ঘটনায় সাহায্য করেছিল জমিদার সাহেবের বিমাত্রেও ভাই কানাইলাল মহলদার। শুধুমাত্র জমিদারি দখল করার জন্যে।</div><div><br></div><div>এর পরেই ঘটে একটা অভূতপূর্ব ঘটনা, সাধারণ মানুষের মধ্যে জাগরণ শুরু হয়, সাধারণ মানুষ দল বেঁধে কানাইলালকে হত্যা করে। অনেক গোরা সৈন্যকেও মেরে ফেলা হয়। এই খবর জানতে পেরে অনেক জমিদার ধন-সম্পদ নিয়ে পাকাপাকি ভাবে বিদেশে চলে যান। এই বলে থামে রিঙ্কি।</div><div><br></div><div>সেদিন আমরা সেই দৃশ্যের সাক্ষী ছিলাম। সেই বিয়ের দিনটা আর সুজিতের বিয়ের দিনটা এক একুশে ফাল্গুন তেরস পঁচিশ আর একুশে ফাল্গুন চোদ্দশো পঁচিশ, আর বছরের পার্থক্যটা ঠিক একশো।</div><div><br></div><div>তবে ঘটনাটা কিভাবে ঘটলো সেই রহস্যটা রহস্যই থেকে গেল।</div><div><br></div><div>এরপর গ্রুপটা ছেড়ে দেয় রিঙ্কি, কিন্তু ঘটনাটা ওর মনে বিরাট প্রভাব ফেলে। এই নিয়ে একটা বইও লিখে ফেলে রিঙ্কি। এরকম একটা ঘটনাকে অলৌকিক বলা হবে নাকি অতিলৌকিক, নাকি নিতান্তই কাকতলীয় সেটা পাঠককূল ভালো বিচারক।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-49396300885381410722020-04-28T01:32:00.001+05:302020-04-28T01:32:55.550+05:30#সুমিতের_গোয়েন্দাগিরি#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>|| কিশোর সাহিত্য | ছোটগল্প ||</div><div>#সুমিতের_গোয়েন্দাগিরি</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>এই দরজাটা বন্ধ থাকে কেন মা? একটা টেনিস বল হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে জিজ্ঞাসা করলো সুমিত। বাড়িটা অনেক পুরোনো, ছোটবেলা থেকে এই বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে খেলেছে সুমিত কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ওই দরজাটা বন্ধ দেখেছে। একান্নবর্তী পরিবারের দ্বিতীয় বৌমা অনিতা। ছাদ থেকে আনা কাপড়চোপড় ভাঁজ করতে করতে প্রশ্নটা শুনেও না শোনার ভান করে অনিতা বলে তুই চান করতে গেলিনা এখনো? দুটো তো বাজতে চললো। সুমিত দের সামার ভেকেশন চলছে, বাড়ি থাকলেই হুড়োহুড়ি ছোটাছুটি লেগেই আছে। আরো কটা বাচ্চা কাচ্চা আছে বাড়িতে তবে সুমিতই লিডার।</div><div><br></div><div>বন্ধ দরজাটা খুব টানে সুমিতকে, কি জানি কি আছে ওই বন্ধ দরজার পেছনে। সুমিত ভুতের সিনেমায় দেখেছে ওই সব ঘরে ভুত থাকে। তালাটাও অনেক পুরোনো, কবে খোলা হয়েছে ভগবান জানে? সুমিত চিলেকোঠার ঘরে একটা পুরোনো বাক্স পেয়েছে ওতে অনেক পুরোনো জিনিসের মধ্যে একগোছা চাবিও ছিল। সুমিত স্নান করে খেয়েদেয়ে চলে যায় সেই ঘরে সাথে পাখি আর টিনা। পাখি সুমিতের কাকার মেয়ে আর টিনা পাখির মাসির মেয়ে, পাখির মাসীরা দুদিন হল ঘুরতে এসেছে ওদের বাড়িতে। ওদের মধ্যে গোপন আলোচনা চলতে থাকে, কাল দুপুরে যখন সবাই ঘুমোতে যাবে তখন ওরা ঘুমাবে না। একসাথে সবাই এখানে দেখা করবে। ওই দরজার ওধারে কি আছে সুমিতের জানতেই হবে। ঠিক দুপুরে সবাই যখন ঘুমিয়ে গেছে, তিন মূর্তি নেমে আসে একতলায় চাবির গোছা নিয়ে সেই দরজার সামনে। সুমিত তালার কোম্পানি লক্ষ্য করে, গোদ্রেজ। গোছায় দুটো গোদ্রেজ চাবি আছে। ঠিক চাবিটা বেছে নিয়ে তলায় ঢুকিয়ে চাবিটা ঘোড়াতেই তালাটা খুলে যায়। তারপর ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করে সুমিত, পেছনে পেছনে বাকি দুজন।</div><div><br></div><div>ঘরটা অন্ধকার হলেও খুব পরিষ্কার। কোথাও কোনো ধুলো নেই। আস্তে আস্তে সাবধানে এগিয়ে চলে ওরা। পাখি একটু ভয় পেলেও হাতটা চেপে ধরে টিনা। একটু এগিয়ে যেতেই ওদের হাত পা হিম হয়ে যায়, একি একটা খাট তাতে কেউ যেন ঘুমিয়ে আছে। এরকম একটা বন্ধ ঘরে কে থাকতে পারে, নিশ্চই ভুত বা রাক্ষস হবে। হাত পা অসার হয়ে যায় ওদের। উল্টো দিকে ফিরে দেখে এক ছায়ামূর্তি ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিন জন একসাথে চিৎকার করে ওঠে বাঁচাও, বাঁচাও। ছায়া মূর্তি দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে থাকে ওদের দিকে। ততক্ষনে খাটে সোয়া রাক্ষসটাও উঠে বসেছে। মনে হচ্চে এখুনি দাঁত বের করে খেয়ে নেবে ওদের। তখনই হটাৎ লাইট টা জ্বলে ওঠে। পেছনের ছায়া মূর্তি টাকে এখন চেনা চেনা লাগছে, বড়জেঠিমা আর খাটে শুয়ে আছে বড় জেঠু। এই বন্ধ ঘরে দুটো মানুষ থাকে যারা আমার বড় জেঠু আর জেঠিমার মতো দেখতে। রাক্ষস রা তো অন্যের রূপ ধরতে পারে, চাঁদমামায় পড়েছিল সুমিত। কিন্তু পালাবে কোথা দিয়ে। এদিকে ওদের চিৎকার শুনে অনেকে ছুটে এসেছে। বাড়ির সবাই অন্য একটা দরজা দিয়ে ঢুকছে ওই ঘরে। এই দেখে আরো ঘাবড়ে যায় ওরা। কোথায় এল ওরা? সবাই ওদের বাড়িয়ে লোকের মতো দেখতে। তার পর যেদিক থেকে সুমিত রা ঢুকে ছিল সেই দিক দিয়ে আসে সুমিতের মা অনিতা। মা কে দেখে কিছুটা সাহস ফিরে পায় সুমিত, বলে পালিয়ে চলো মা। এর সব রাক্ষস মানুষের রূপ নিয়ে আছে এখুনি আমাদের খেয়ে নেবে। বাবার মতো দেখতে রাক্ষস টা হটাৎ এগিয়ে এসে সুমিতের কান টা টেনে বাইরে নিয়ে গেল। বাইরে গিয়ে সুমিত আরো অবাক হয়ে গেল বাইরেটও ওদের বাড়ির মতোই। অবাক হয়ে যায় সুমিত ভুতদের কত বড় ক্ষমতা। ওরা যখন তালা খোলা দরজাটার সামনে দাঁড়ালো তখনও সুমিত বুঝতে পারেনি কি চলছে।</div><div><br></div><div>-" তুই পুরোনো বাথরুমের দিকের এই তালা খুলে বড় জেঠার ঘরে ঢুকেছিলি? কেন তোর জেঠা তোকে ঘরে ঢুকতে দেয়না? অসভ্য ছেলে কোথাকার!"</div><div><br></div><div>এইবার সুমিত বুজতে পারে ব্যাপার টা কি। তার পর মুখ নিচুকরে পালিয়ে গিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে। তার পর থেকে সুমিত আর কোনো গোয়েন্দাগিরি করতে যায় নি। সুমিত এখন এম.বি.এ পড়ছে,তবে টিনা এখনো ফোন করে জিগ্যেস করে, সুমিত তোদের বাড়ির রাক্ষসেরা কেমন আছে রে?সুমিত হাসে আর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, ভালো আছে!!</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-12935903860785865832020-04-28T01:31:00.003+05:302020-04-28T01:31:58.070+05:30#ভুটানি#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#ভুটানি</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>ভরা শ্রাবণ মাস চলছে। রোদ ঝলমলে দুপুর। হঠাৎ মায়ের ইচ্ছে সবাই মিলে ছবি তুলতে যাওয়া হবে। যেই সময়ের কথা বলছি তখন ছবি তুলতে যাওয়া মানে বিরাট ব্যাপার। সবাই মিলে সেজে গুজে স্টুডিও তে ছবি তুলতে যাওয়া, তারপর সেই ছবি বাড়িতে আসলে সবাই মিলে দেখা, একটা ছোটখাটো উৎসব ছিল। ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে খুশির কোনো অভাব ছিল না। সবাই তখন মোটামুটি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।</div><div> বাবা কে যখন বলা হল, এক কথায় সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেল। এই ভর বর্ষায় বিকালে এতটা দূর যাওয়া ঠিক হবেনা। শুনে দিদির কি কান্না, কপালের টিকলিটাও খুলে ফেলেছে তখন। সবাই তখন মোটামুটি বুঝে গেছে, বাবা না করেছে মানে আর যাওয়া হবেনা। সবাই মনমরা হয়ে বসে আছে। একটাই পথ ঠাকুমাকে দিয়ে যদি বাবাকে বলানো যায়। আমরা চারজন গিয়ে ধরলাম ঠাকুমাকে। শেষ পর্যন্ত ঠাকুমা রাজি হল।</div><div> খোকা! হ্যারা যাইতে চায়, রোজ রোজ তো চায়না। লইয়া যা না। পোলাপানের মুখগুলান দেহন যায়না।</div><div>কি যে কউ না মা এই ভর বর্ষায় কেই এত দূরে হাইটা যায়, যহন তহন বৃষ্টি নামতাসে। </div><div>তুই হ্যাগো লইয়া যা। কিচ্ছু হৈবোনা।</div><div>অত:পর ছবি তুলতে যাওয়া হবে, সেই প্রস্তাবে সিলমোহর পড়লো।</div><div>তাহেরপুর থেকে বীরনগর প্রায় দু কিলোমিটার পথ। সেই সময় গ্রামের মানুষ বেশিরভাগ হেঁটেই চলাচল করত। রিকশাভ্যান কিছু ছিল কিন্তু সবার জন্য নয়। যখন বেরোনো হয়েছিল তখন বিকাল পড়ে গেছে। ছাতা সেই যুগে খুব কমই ব্যাবহার হতো। ছাতাটা নিয়েও বেরোনো হয়নি, আর নিয়েই বা কি হবে ছয় জন মানুষের জন্যে একটা ছাতা দৃশ্যতই অপর্যাপ্ত।</div><div>স্টুডিওর ভেতরের সাজসজ্জা দেখে সবাই অবাক। এর আগে আমারা কোনোদিন স্টুডিও তে আসিনি,বাবা মা এসেছিল একবার বিয়ের পর। </div><div>কত ছবি, কত সিনারি, সে একেবারে দেখার মতন। বেশ কটা ছবি তোলা হল। তখন কিন্তু এখনকার মতন ছবি তোলার পরেই দেখা যেত না ক্যামেরার ভিতরে ফিল্ম ভরা থাকতো, সেই ফিল্ম ডেভেলপ করার পর ছবি পাওয়া যেত।</div><div>ছবি তুলে বেরিয়ে দেখি বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে। বাবা আকাশের অবস্থা দেখে বলল, মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে তাড়াতাড়ি পা চালাও। বেশি দূর যেতে হল না পদ্মপুকুর টা পার হবার পরেই শুরু হয়ে গেল । মুষলধারে বৃষ্টি আর সাথে ঝোড়ো হওয়া। তার মধ্যে অন্ধকার রাত্রি, বিদ্যুতের ঝলকানি দেখে কোনোমতে অনুমান করে রাস্তা চলতে হচ্ছে। সবাই ভিজে একসার অবস্থা। ছোট বাজারটার কাছে যখন পৌঁছেছি, রাস্তায় তখন জল দাঁড়িয়ে গেছে। খানাখন্দ খাল বিল সব একেবারে ভরপুর। সেই সময় ইলেকট্রিক ছিল না আর রাস্তার আলো তো ভাবতেই পারা যেতনা।</div><div><br></div><div> হটাৎ সামনে মনে হল কিছু মানুষ হাঁটছে। ক্ষনিকের আলো তে খুব ভালো করে বোঝাও যাচ্ছেনা। মনে হলো একজন সাদা শাড়ি পরিহিতা মহিলা দুই সন্তান কে নিয়ে চলেছে। আমরা জোরে হেঁটেই ধরতে পারছিনা। হটাৎ একটা ঝলকানিতে মনে হলো তিনজনের মধ্যে একজন নেই। যেন হটাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল একজন। আমরা প্রত্যেকে ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। এরকম অন্ধকার রাস্তা তার মধ্যে মুসলধারায় বৃষ্টি সেই সাথে এরকম দৃশ্য, ভয় একটু পাওয়ার কথাই বটে।</div><div>হটাৎ একটি চিৎকার আমাদের কানে এলো। এক ভদ্রমহিলার চিৎকার কিন্তু কোথা থেকে আসছে তা বোঝা যাচ্ছেনা। এই অন্ধকারে, ছয়জন লোক তবুও একটু অসহায় লাগলো। প্রথমটায় আগাতে সাহস পাইনি, কি দেখতে কি দেখেছি কিন্তু যখন ছোট ভাইটা চিৎকার করে বললো কে গো ওখানে, তখন বুঝতে পারলাম আমি যা দেখছি সবাই তাই দেখছে।সাহস করে একটু এগিয়ে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম, কি হয়েছে?</div><div>এক মহিলা কাঁদছে, শুনে মনে হলো বলছে ভুটানি!ভুটানি! ভুটানের লোকেদের ভুটানি বলা হয় বলে পড়েছিলাম ভূগোল বইয়ে। পাশে আরেকটা বাচ্চা সেও কাঁদছে। আর দুজনে অন্ধকারে কিছু একটা হাঁতড়ে খুঁজছে। আমরা ভাবলাম হয়তো দামি কিছু পড়ে গেছে। আমরাও কাজে হাত লাগলাম কিন্তু কি খুঁজতে হবে তা বুঝতে পারলাম না। </div><div>হটাৎ একটা বাচ্চার ডাকে আমাদের ঘোর ভাঙলো। মা! আমি এহেনে। গর্তে পইড়া গেছি। দেখলাম রাস্তার পাশে একটা গর্তে একটা বাচ্চা গলা জলে দাঁড়িয়ে আছে, অন্ধকারে ঠিক করে ঠাহর করতে না পারলেও মনে হল একটা বাচ্চা মেয়ে। ভদ্রমহিলা আবার চেচিয়ে উঠলো আমার ভুটানি আমার ভুটানি। আমরা তো অবাক মেয়েটার নাম ভুটানি যাই হোক বাবা গিয়ে ভুটানি কে উদ্ধার করলেন গর্ত থেকে। জানা গেল বাড়িটা কাছেই খাঁ পাড়ার দিকের রাস্তাটায়। বাড়ির কাছাকাছি রাস্তাটা দিয়েই ঢুকতে হয় ওদের গ্রামে। এর মধ্যে বৃষ্টি টা ছেড়েছে আকাশটাও খোলতাই হয়েছে।চাঁদ ও উঠেছে পূর্ণিমার। বাবা ভেজা গায়েই আমাদের বাড়ি ছেড়ে ওদের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো হারিকেন টা নিয়ে।</div><div>ওই ঝড় জলের রাতের পুরো ব্যাপার টা জানতে পারলাম পরের দিন। ভুট্টো আর ভুটানি কে নিয়ে ওদের মা খেন্তকালী গেছিলো পাশের পাড়ায় কালীতলায় পূজা দিতে, ভুটানির বাপ বিদেশ থেকে ফিরেছে সেই খুশিতে। ফেরার পথে গন্ডগোল, মুষলধারে বৃষ্টি তার সাথে ভুটানির অন্তর্ধান। সব মিলে মিশে একেবারে বিচ্ছিরি অবস্থা। কালকের বৃষ্টিতে বাবার একটু ঠান্ডা লেগেছে, তাই নিয়ে সকাল থেকেই গাল মন্দ চলছে। ঠাকুমা এসে বললো খোকা তুই ভাব তুই না হইলে কেডা ভুটানিরে বাচাইতো ক তো? আমরা সবাই মুখ চাপা দিয়ে হাসলাম। </div><div>পরে ভুটানির বাপ এসেছিল আমাদের বাড়ি ভুটানি আর ভুট্টো কে নিয়ে বাবাকে ধন্যবাদ জানাতে। ভুট্টো বাচ্চা ছেলেটার নাম। বাবা জিজ্ঞাসা করেছিল ভুটানির এরকম অদ্ভুত নামকরণের কারণ। ভুটানির বাবা বললো আসলে ভুটানি যখন হল তখন ভুটানির বাবা বাড়িতে ছিলোনা, অশিক্ষিত খেন্তকালী ভুট্টোর সাথে মিলিয়ে রাখতে গিয়ে নিজেই মেয়ের নাম ভুটানি রেখেছে। সেই বৃষ্টির রাতে আমাদের হটাৎ ভুটানি দেখার ব্যাপারটাই কিন্তু আলাদা ছিল।আজও ভুলতে পারিনি।</div><div><br></div><div>(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-27776985302986119682020-04-28T01:31:00.001+05:302020-04-28T01:31:32.108+05:30#অদ্ভুত_দেখতে_লোকটা!#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#অদ্ভুত_দেখতে_লোকটা!</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>কিছু কিছু ঘটনা বড়ই অদ্ভুত হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই সব ঘটনাকে শুধু বর্ণনা দেওয়া যায়, কিন্তু অর্থ খোঁজা বড়ই কঠিন।</div><div>ধানবাদে কাপড়ের ব্যাবসা অমিতের। শান্তিপুর, ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি ওখানকার বড় বড় দোকানে নিজেই পৌঁছে দেয় ও। নিজের পুঁজি তাই ব্যাবসা বেশ বড় হলেও নিজেই পুরোটা সামলায়। কাজের সূত্রে যাতায়াত লেগেই থাকে ওর। যাওয়ার সময় ঠিক থাকলেও ফেরাটা নির্ভর করে ক্লায়েন্ট দের উপর। মাঝে মাঝেই অনেক রাত হয়ে যায় সব সেরে স্টেশনে পৌঁছাতে। সেরকমই ছিল সেই দিনটা।</div><div>এক বড় ব্যাবসায়ীর সঙ্গে মিটিং সেরে এবং অন্যান্য সমস্ত কাজ গুটিয়ে যখন অমিত ধানবাদ স্টেশনে পৌঁছালো তখন রাত দেড়টা বেজে গেছে। কোনোমতে স্টেশন থেকে একটা টিকিট কেটে একটা সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়ে অমিত।</div><div>এ কাজ সে আগেও করেছে, ট্রেনে উঠে টিটির হাতে কিছু গুঁজে দিলে একটা ভালো সিটের ব্যাবস্থা হয়ে যায়। সমস্যায় যে পড়েনি তা নয়, তবে সেই অনুপাতে খুব কম। এভাবে হলে আর কে রিজার্ভেসনের ঝক্কি নেবে, মনে মনে হাসে অমিত। সেদিনও কাজ হয়ে গেল, মিলেও গেল একটা সিট। একেবারে আপার।</div><div>এই একটা বড় সমস্যা অমিতের, যতই জার্নিতে অভ্যস্ত হোক না কেন, রাতে কিছুতেই ঘুম আসেনা ট্রেনে। কিসব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা শুধু ঘুরপাক খায় মাথায়। কখনো মনে হয় ট্রেনটা যদি একসিডেন্ট করে, কি হবে তাহলে? বা যদি কোনো ডাকাত সর্দার হারে রে রে করে বন্দুক ধরে বুকে ইত্যাদি! ইত্যাদি! রাতটা যেন শেষ ই হয়না অমিতের। বাড়িতে ভোরে ঘুম ভাঙলে চোখ খুলে ছটা বাজে দেখার পর সাতটা বাজতে যেমন সময় লাগেনা তেমনি রাত জেগে জেগে শুধু যদি ভোরের অপেক্ষা করা হয় তাহলে রাত শেষ হতে চায় না। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করে টয়লেটের দিকে যায় অমিত। দরজাটা হালকা খুলে সিগারেট টা ধরায় ও। হটাৎ মনে পড়ে যায় রাধিকার কথা, প্রথম প্রেম অমিতের। সেই টানা টানা চোখ, আগুন দৃষ্টি এখনও মনে পড়লে শিহরিত হয় অমিত। হটাৎ ট্রেনের দরজায় একটা লাঠির বাড়ি র আওয়াজ নিমেষে ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। পুলিশ ভেবে ক্ষমা চাইতে যাবে এমন সময় দেখে এক ভিখারী চলন্ত ট্রেনে উঠবে বলে আওয়াজ করছে। </div><div>কি অদ্ভুত দেখতে লোকটা। সমস্ত মুখটা পোড়া পোড়া দাগ, চোখগুলো যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে বাইরে, মাথায় একফোঁটা চুল নেই। হাতে একটা সরু বাঁশের লাঠি, ওটা দিয়েই দরজায় আঘাত করার শব্দ বোধ হয়।</div><div>দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রেমিকার কথা ভাবলে হবে? আমার পেটে চলবে কিভাবে? সাইড দে হতভাগা! ট্রেনটাকে বাবার সম্পত্তি বলে ভেবেছিস? বলে বলে হা হা করে হাসতে থাকে ভিখারী টা। কারণ ছাড়া এতগুলো কথা শুনে রাগ হয় অমিতের। দে! দশটা টাকা দে! অমিত তখন বেশ রেগে আছে। কোনো কথার উত্তর না দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে অমিত। এগুলো পৃথিবীর বোঝা, এগুলোকে ভগবান কেন তুলে নেয় না কে জানে? </div><div>কিরে মৃত্যু কামনা করছিস? শকুনের শাপে গরু মরে নাকি রে? আবার সেই হাসিটা হাসতে থাকে ভিখারী টা। হ্যাঁ আমি শকুন আর আমি তোর মৃত্যু কামনাই করছি। টাকাটা দেব ভাবছিলাম কিন্তু তোকে দেব না। মর গে যা! মনে মনে কথা গুলো ভেবে সিগারেট টা ছুড়ে ফেলে নিজের সিটের দিকে রওনা দেয় অমিত। ট্রেনটা তার নিজস্ব গতিবেগ এগিয়ে চলেছে।</div><div>বড্ড ফালতু বকে লোকটা! কিন্তু ও যে কটা কথা বলেছে একটাও মিথ্যে নয়। প্রেমিকার কথা ভাবার ব্যাপার টা কাকতলীয় হলেও, মৃত্যু কামনার ব্যাপার টা? সত্যিই তো মৃত্যু কামনা করেছে।</div><div>এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের সিটটায় উঠতে গিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয় অমিতের। এইমাত্র যেই ভিখারী কে গেটের কাছে দেখে এসেছে সে এত তাড়াতাড়ি ওর সিটে উঠে বসলো কি করে? </div><div>এত ভয় পেলি কেন রে? হা:হা:হা: দশটা টাকা দে নেমে যাব, বলে ভিখারী টা। মুখ টা যেন এক জ্যান্ত বিভীষিকা। ওই অন্ধকারে হটাৎ দেখলে অনেকে অজ্ঞান হয়ে যাবে। সিট থেকে নামাতে বেশ বেগ পেতে হল অমিতের, সিট টা একেবারে উপরের বলে কষ্টটা আরো বেশি হয় ।অনেকটা জোর করেই নামানো হয় লোকটাকে। তারপর সিটে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেবে ঠিক করে অমিত। সিটে উঠে চোখটা বন্ধ করে মাথাটাকে একটু ঠান্ডা করার চেষ্টা করে অমিত। হটাৎ চোখ খুলে দেখে, চারিদিকে লোক জন ওকে ঘিরে রেখেছে। ও রেল লাইনে শুয়ে আর লাইনের বাইরের দিকটায় একটা দেহের অর্ধেক অংশ পড়ে আছে। হটাৎ নিজের দিকে চেয়ে আঁতকে ওঠে ওর শরীরের নিচের অংশ নেই। কিন্তু ওর শরীরের পোশাকটা অনেকটা ওই ভিখারী টার মতো। সেই বীভৎসতা বর্ণনা করার মতো নয়। শরীর টা দুটো খণ্ড হলেও কোনো রক্ত নেই। চোখটা বন্ধ করে চিৎকার করে ওঠে অমিত। হটাৎ চোখটা খুলে উঠে অমিত দেখে বাথরুমের পাশে বসে ঘুমাচ্ছিল এতক্ষন, ট্রেনের দরজাটা একটু খোলা আছে যেমনটা ও সিগারেট খাওয়ার জন্য খুলেছিল। উঠতে গিয়ে বুঝতে পারে একটু কষ্ট হচ্ছে যেন, হাতের পাশে একটা বাঁশের লাঠি পড়ে আছে, লাঠিটা তে ভর দিয়ে উঠে হটাৎ বেসিনের কাঁচের দিকে মুখ যেতেই বিস্ময়ে ফেটে পড়ে ও। একি! পোশাকটা ওর ই বটে তবে ওর মুখটা অবিকল সেই ভিখারি টার মত।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা ও। ঘুমটা ভেঙে যায় একটা চিৎকার চেঁচামেচিতে। কি হচ্ছে এসব ?কোনটা ঘুম কোনটা স্বপ্ন কিছুই বুঝতে পারছেনা অমিত।একটু ধাতস্থ হয়ে কি হয়েছে দেখার জন্যে উঁকি দেয় অমিত। একটা ভিখারী কাটা পড়েছে। অমিত তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে ট্রেন থেকে নেমে যেখানে লোকের ভিড় সেই দিকটায় যায়। সেকি এতো বরাকর! আমি তো দু ঘন্টা আগেই পার হয়ে এসেছি। ভাবতে ভাবতে পা চালায় অমিত। একটা দেহ কেটে দু টুকরো হয়ে আছে। মুখের কাছটায় গিয়ে অমিত বাকরুদ্ধ হয়ে যায়, এতো সেই ভিখারী। যার সাথে বরাকর স্টেশনে দেখা হয়েছিল! যেন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সেই ভয়ঙ্কর হাসিটা দিচ্ছে। লাঠিটাও একই রকম। মনে হয় চলতি অবস্থায় উঠতে গিয়ে এই হাল, বলছে লোকজন। লোকটার হাতে কিছু একটা মুঠো করা আছে, দেখে মনে হচ্ছে একটা নতুন দশ টাকার নোট। </div><div>তাড়াতাড়ি মানিব্যাগটা হাতড়ে বার করলো অমিত। মানিব্যাগে নতুন দশ টাকার নোট একটাই ছিল, সেটা এখন সেখানে নেই। অন্য কোথাও খরচা ও করার সুযোগ ছিলনা এত রাতে। এই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে অমিত বুঝে উঠতে পারছে না যে ও কি আদৌ জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। ও যেন স্বপ্নের মধ্যেই হারিয়ে গেছে। বাস্তব আর স্বপ্নের পার্থক্যটাও কিন্তু বোঝা খুব কঠিন। আপনারা কি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন?আমি বুঝে উঠতে পারিনি আপনারা যদি বুঝে থাকেন তবে জানাবেন।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-36653427342200508672020-04-28T01:29:00.001+05:302020-04-28T01:29:20.233+05:30#ভুটানি#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#ভুটানি</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>ভরা শ্রাবণ মাস চলছে। রোদ ঝলমলে দুপুর। হঠাৎ মায়ের ইচ্ছে সবাই মিলে ছবি তুলতে যাওয়া হবে। যেই সময়ের কথা বলছি তখন ছবি তুলতে যাওয়া মানে বিরাট ব্যাপার। সবাই মিলে সেজে গুজে স্টুডিও তে ছবি তুলতে যাওয়া, তারপর সেই ছবি বাড়িতে আসলে সবাই মিলে দেখা, একটা ছোটখাটো উৎসব ছিল। ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে খুশির কোনো অভাব ছিল না। সবাই তখন মোটামুটি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।</div><div> বাবা কে যখন বলা হল, এক কথায় সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেল। এই ভর বর্ষায় বিকালে এতটা দূর যাওয়া ঠিক হবেনা। শুনে দিদির কি কান্না, কপালের টিকলিটাও খুলে ফেলেছে তখন। সবাই তখন মোটামুটি বুঝে গেছে, বাবা না করেছে মানে আর যাওয়া হবেনা। সবাই মনমরা হয়ে বসে আছে। একটাই পথ ঠাকুমাকে দিয়ে যদি বাবাকে বলানো যায়। আমরা চারজন গিয়ে ধরলাম ঠাকুমাকে। শেষ পর্যন্ত ঠাকুমা রাজি হল।</div><div> খোকা! হ্যারা যাইতে চায়, রোজ রোজ তো চায়না। লইয়া যা না। পোলাপানের মুখগুলান দেহন যায়না।</div><div>কি যে কউ না মা এই ভর বর্ষায় কেই এত দূরে হাইটা যায়, যহন তহন বৃষ্টি নামতাসে। </div><div>তুই হ্যাগো লইয়া যা। কিচ্ছু হৈবোনা।</div><div>অত:পর ছবি তুলতে যাওয়া হবে, সেই প্রস্তাবে সিলমোহর পড়লো।</div><div>তাহেরপুর থেকে বীরনগর প্রায় দু কিলোমিটার পথ। সেই সময় গ্রামের মানুষ বেশিরভাগ হেঁটেই চলাচল করত। রিকশাভ্যান কিছু ছিল কিন্তু সবার জন্য নয়। যখন বেরোনো হয়েছিল তখন বিকাল পড়ে গেছে। ছাতা সেই যুগে খুব কমই ব্যাবহার হতো। ছাতাটা নিয়েও বেরোনো হয়নি, আর নিয়েই বা কি হবে ছয় জন মানুষের জন্যে একটা ছাতা দৃশ্যতই অপর্যাপ্ত।</div><div>স্টুডিওর ভেতরের সাজসজ্জা দেখে সবাই অবাক। এর আগে আমারা কোনোদিন স্টুডিও তে আসিনি,বাবা মা এসেছিল একবার বিয়ের পর। </div><div>কত ছবি, কত সিনারি, সে একেবারে দেখার মতন। বেশ কটা ছবি তোলা হল। তখন কিন্তু এখনকার মতন ছবি তোলার পরেই দেখা যেত না ক্যামেরার ভিতরে ফিল্ম ভরা থাকতো, সেই ফিল্ম ডেভেলপ করার পর ছবি পাওয়া যেত।</div><div>ছবি তুলে বেরিয়ে দেখি বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে। বাবা আকাশের অবস্থা দেখে বলল, মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে তাড়াতাড়ি পা চালাও। বেশি দূর যেতে হল না পদ্মপুকুর টা পার হবার পরেই শুরু হয়ে গেল । মুষলধারে বৃষ্টি আর সাথে ঝোড়ো হওয়া। তার মধ্যে অন্ধকার রাত্রি, বিদ্যুতের ঝলকানি দেখে কোনোমতে অনুমান করে রাস্তা চলতে হচ্ছে। সবাই ভিজে একসার অবস্থা। ছোট বাজারটার কাছে যখন পৌঁছেছি, রাস্তায় তখন জল দাঁড়িয়ে গেছে। খানাখন্দ খাল বিল সব একেবারে ভরপুর। সেই সময় ইলেকট্রিক ছিল না আর রাস্তার আলো তো ভাবতেই পারা যেতনা।</div><div><br></div><div> হটাৎ সামনে মনে হল কিছু মানুষ হাঁটছে। ক্ষনিকের আলো তে খুব ভালো করে বোঝাও যাচ্ছেনা। মনে হলো একজন সাদা শাড়ি পরিহিতা মহিলা দুই সন্তান কে নিয়ে চলেছে। আমরা জোরে হেঁটেই ধরতে পারছিনা। হটাৎ একটা ঝলকানিতে মনে হলো তিনজনের মধ্যে একজন নেই। যেন হটাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেল একজন। আমরা প্রত্যেকে ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। এরকম অন্ধকার রাস্তা তার মধ্যে মুসলধারায় বৃষ্টি সেই সাথে এরকম দৃশ্য, ভয় একটু পাওয়ার কথাই বটে।</div><div>হটাৎ একটি চিৎকার আমাদের কানে এলো। এক ভদ্রমহিলার চিৎকার কিন্তু কোথা থেকে আসছে তা বোঝা যাচ্ছেনা। এই অন্ধকারে, ছয়জন লোক তবুও একটু অসহায় লাগলো। প্রথমটায় আগাতে সাহস পাইনি, কি দেখতে কি দেখেছি কিন্তু যখন ছোট ভাইটা চিৎকার করে বললো কে গো ওখানে, তখন বুঝতে পারলাম আমি যা দেখছি সবাই তাই দেখছে।সাহস করে একটু এগিয়ে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম, কি হয়েছে?</div><div>এক মহিলা কাঁদছে, শুনে মনে হলো বলছে ভুটানি!ভুটানি! ভুটানের লোকেদের ভুটানি বলা হয় বলে পড়েছিলাম ভূগোল বইয়ে। পাশে আরেকটা বাচ্চা সেও কাঁদছে। আর দুজনে অন্ধকারে কিছু একটা হাঁতড়ে খুঁজছে। আমরা ভাবলাম হয়তো দামি কিছু পড়ে গেছে। আমরাও কাজে হাত লাগলাম কিন্তু কি খুঁজতে হবে তা বুঝতে পারলাম না। </div><div>হটাৎ একটা বাচ্চার ডাকে আমাদের ঘোর ভাঙলো। মা! আমি এহেনে। গর্তে পইড়া গেছি। দেখলাম রাস্তার পাশে একটা গর্তে একটা বাচ্চা গলা জলে দাঁড়িয়ে আছে, অন্ধকারে ঠিক করে ঠাহর করতে না পারলেও মনে হল একটা বাচ্চা মেয়ে। ভদ্রমহিলা আবার চেচিয়ে উঠলো আমার ভুটানি আমার ভুটানি। আমরা তো অবাক মেয়েটার নাম ভুটানি যাই হোক বাবা গিয়ে ভুটানি কে উদ্ধার করলেন গর্ত থেকে। জানা গেল বাড়িটা কাছেই খাঁ পাড়ার দিকের রাস্তাটায়। বাড়ির কাছাকাছি রাস্তাটা দিয়েই ঢুকতে হয় ওদের গ্রামে। এর মধ্যে বৃষ্টি টা ছেড়েছে আকাশটাও খোলতাই হয়েছে।চাঁদ ও উঠেছে পূর্ণিমার। বাবা ভেজা গায়েই আমাদের বাড়ি ছেড়ে ওদের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো হারিকেন টা নিয়ে।</div><div>ওই ঝড় জলের রাতের পুরো ব্যাপার টা জানতে পারলাম পরের দিন। ভুট্টো আর ভুটানি কে নিয়ে ওদের মা খেন্তকালী গেছিলো পাশের পাড়ায় কালীতলায় পূজা দিতে, ভুটানির বাপ বিদেশ থেকে ফিরেছে সেই খুশিতে। ফেরার পথে গন্ডগোল, মুষলধারে বৃষ্টি তার সাথে ভুটানির অন্তর্ধান। সব মিলে মিশে একেবারে বিচ্ছিরি অবস্থা। কালকের বৃষ্টিতে বাবার একটু ঠান্ডা লেগেছে, তাই নিয়ে সকাল থেকেই গাল মন্দ চলছে। ঠাকুমা এসে বললো খোকা তুই ভাব তুই না হইলে কেডা ভুটানিরে বাচাইতো ক তো? আমরা সবাই মুখ চাপা দিয়ে হাসলাম। </div><div>পরে ভুটানির বাপ এসেছিল আমাদের বাড়ি ভুটানি আর ভুট্টো কে নিয়ে বাবাকে ধন্যবাদ জানাতে। ভুট্টো বাচ্চা ছেলেটার নাম। বাবা জিজ্ঞাসা করেছিল ভুটানির এরকম অদ্ভুত নামকরণের কারণ। ভুটানির বাবা বললো আসলে ভুটানি যখন হল তখন ভুটানির বাবা বাড়িতে ছিলোনা, অশিক্ষিত খেন্তকালী ভুট্টোর সাথে মিলিয়ে রাখতে গিয়ে নিজেই মেয়ের নাম ভুটানি রেখেছে। সেই বৃষ্টির রাতে আমাদের হটাৎ ভুটানি দেখার ব্যাপারটাই কিন্তু আলাদা ছিল।আজও ভুলতে পারিনি।</div><div><br></div><div>(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-67921409816976414022020-04-28T01:27:00.001+05:302020-04-28T01:27:05.629+05:30#পটলবাবুর_পটল_তোলা#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#পটলবাবুর_পটল_তোলা</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>ছোটবেলায় একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে। তখন ক্লাস এইটে পড়ি। যতটা না পড়ি তার চাইতে গুন্ডামি বেশী করতাম স্কুলে। সহপাঠীদের মধ্যে বাপি আমার বেশ কাছের বন্ধু ছিল। আমার বইয়ের ঐতিহাসিক চরিত্র গুলোতে কাল্পনিক কথোপকথন লিখতাম, যেমন মহারানা প্রতাপ ঘোড়ার উপরে বসে আছেন, আমি লিখলাম "এই ঘোড়া বেশি নড়াচড়া করিসনা পরে যাবো যে" বা গান্ধীজি এবং মোহাম্মদ আলী জিন্না দুজনে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তাতে লিখলাম " চলো জিন্না ভাই আমরা ভারত ভাগ করে খাই" ইত্যাদি ইত্যাদি। একদিন বাপি একটা বেশ বড় কাগজ গোল করে পেঁচিয়ে নিয়ে স্কুলে এসেছে। কাগজটার উপরে লেখা " হ্যারিকেন বাজার পত্রিকা" যেই রকম খবরের কাগজ থাকে ঠিক তেমন। আর যেমন টপিক থাকে সেই জায়গায় লেখা রয়েছে " কাতলার ধাক্কায় বিরাট জাহাজ ডুবি" বা "পিঁপড়ের ধাক্কায় লুঙ্গির লরি উল্টে গেল কাঁঠাল তলায়"। আমরা তো পড়ে হাসতে হাসতে লুটোপুটি অবস্থা। বাকি ফাঁকা প্লট আমি লিখলাম। "সন্ধে বেলায় পটল তুলতে গিয়ে নিজেই পটল তুললেন পটল বাবু" প্রতিবেদন টা ছিল এইরকম।</div><div><br></div><div>নিজস্য সংবাদদাতা, ফুলিয়া </div><div>তারিখ-ছয় জুন,1996 </div><div><br></div><div>প্রতিদিনের মতোই পটলাকান্ত ঘোষ সকালের পটল তুলে বাজারে গিয়েছিলেন। সকলে বাজারে ওনাকে পটল বাবু বলেই ডাকেন। পটল বাবু সমৃদ্ধ চাষী হলেও ওনার একটা বদনাম আছে, উনি ভয়ানক কিপটে। এবার ফসল ফলার পর বাড়ির একজনকেও পটল তুলতে দেননি কারণ তাতে পটল বাবুর পটল চুরি হবার প্রবল সম্ভাবনা আছে। দুপুরে ওনার স্ত্রী একটু কচি পাঠার মাংস আনতে বলেন। তাতে উনি ভয়ানক রেগে যান এবং পুকুর পাড় থেকে কলমির শাগ নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। বাড়িতে পৌঁছে দেখেন বিরাট আয়োজন। তিন কিলো কচি পাঠার মাংস রান্না হয়েছে। কোথা থেকে এলো এত কিছু? জিজ্ঞাসা করেন স্ত্রী কে। উত্তরে স্ত্রী বলেন আমার ভাই পবন এসেছে বউ বাচ্চা নিয়ে, আসার পথে পাঠার মাংস নিয়ে এসেছে। এতে যারপরনাই খুশি হয়ে কিলো খানেক পাঠার মাংস খেয়ে ফেলেন পটল বাবু। কিন্তু বাড়ির পেছনে যাওয়ার সময় একটি ঝুড়িতে কিছু পটল দেখে সন্দেহ হয় ওনার। ততক্ষনে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি মাঠে গিয়ে পটল গুনে দেখেন প্রায় ছিয়াত্তর টা বয়স্ক পটল কম। তাতেই ভদ্দ্রোলক বুকের ব্যাথা অনুভব করেন এবং মাঠেই পটল তোলেন। পরে জানা যায় পটল বাবুকে বলে মাংস আসবেনা বলেই জানতেন তাই ছোট ছেলে রতন কে দিয়ে মাঠ থেকে কটা পটল আনিয়ে বাজারে বিক্রি করিয়ে মাংস আনান পটল বাবুর স্ত্রী। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পটল তোলা পটল বাবুর পরিবার প্রচন্ড বিপর্যস্ত। </div><div><br></div><div>শেষ লেখা যখন প্রায় শেষ দেখলাম আসে পাশে কেউ নেই আমি একা লিখে চলেছি। আর সুনীল স্যার লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। লাঠির বাড়ি খেতে হয়নি সেই যাত্রায়। কারণ লেখাটা নাকি ওনার পছন্দ হয়েছিল।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-84480992799465378092020-04-28T01:20:00.001+05:302020-04-28T01:20:45.152+05:30#অনু_গল্প#বিসর্জন#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#অনু_গল্প</div><div>#বিসর্জন</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>তখন সন্ধের সূর্য টা ডুবতে বসেছে।</div><div>আমি একটা ছোটো ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে মাঝ গঙ্গায়।</div><div>চারিদিক শান্ত নিস্তব্ধতা কখন সন্ধের আলোটাকে চুরি করে নিল জানিনা।</div><div>জলের ছপাক ছপাক আওয়াজ টা যেনো দাড় টাকে ছুয়ে আরো পরিণত হয়েছে।</div><div>দূরের আলোটা নদীর গা বেয়ে এক আলোআধারী,</div><div>যেন সোনার নৌকা ভাসিয়েছে।</div><div>চাঁদটা আজ একফালি, জোছনার খামতি নেই।</div><div>সাদা কালো সেই জলের স্রোত</div><div>জীবনের স্রোতের মতোই ছলছলিয়ে এগিয়ে চলেছে।</div><div>আমি এসেছি কিছু বিসর্জন দিতে।</div><div>আমার প্রিয় কিছু, এমন কিছু যা সবার সামনে দেওয়ার নয়।</div><div>হয়তো বুকের অচিন গহ্ববরের জমে থাকা অভিমান বা কোনো অবক্ত ভালোবাসার অস্ফুট মুহুর্ত।</div><div>ছুড়ে দিলাম সেই আংটিটা, আমাদের মধ্যেকার সেই জীর্ণ সেতু।</div><div>অন্ধকারের মাঝেই কোথায় একটা ঝুপ করে আওয়াজ হলো, শেষ হলো সেই অদৃশ্য বন্ধন।</div><div>আর সেই কবিতার খাতাটা, তোমার বালিশের তলা থেকে চুরি করেছিলাম।</div><div>তৃতীয় পাতায় সেই ভাজ করা শুকনো গোলাপ ফুলটা,</div><div>আর অজস্র স্মৃতি কথা।</div><div>তাকেও ভাসিয়েছে আজ।</div><div>অনেকটা হালকা হালকা লাগছে এখন।</div><div>তবে জানিনা কেন চোখের জল বাঁধ মানছেনা।</div><div>দূরের আকাশ টা আরো স্পষ্ট আর নির্মেঘ।</div><div>একটা বড় নৌকায় তখন বেজে চলেছে"মেরা কুছ সামান তুমহারে পাস পড়া হাই"।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-28608313283524079382020-04-28T01:19:00.001+05:302020-04-28T01:19:27.436+05:30#অনুগল্প#মোটিভ#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#অনুগল্প</div><div>#মোটিভ</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>বাথটব টার ভেতরে ডুবে বসে আমি তখনও হেসে চলেছি। বাইরে একটা শোরগোলের আওয়াজ পাচ্ছি। ছুরিটা টাবের ডান পাশে রাখা, টাবের জলটা আমার হাতে রাঙানো রক্তের রঙে লাল। সুমনার লাশ টা বাথরুমের দরজার ঠিক মাঝখানে উপরের দিকে হাঁ করে পড়ে আছে। বাথরুমের বাইরে লবির কিছু সাজানো জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে।</div><div>মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা করছে আজ। বা হাতে স্কচের স্বচ কাঁচের বোতলের থেকে তরল টা একটা গ্লাসে ঢেলে আস্তে আস্তে সিপ নিতে থাকলাম আর ঘটনাক্রমে ভাবতে থাকলাম। </div><div>ঘরে যখন ঢুকলাম ডুপ্লিকেট চাবিটা দিয়ে তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। আস্তে করে ঢুকে দরজাটা লক করলাম। ঢুকতে গিয়ে আমার অবর্তমানে বাড়িতে অন্য পুরুষের উপস্থিতি অনুভব করলাম। অবাক হয়নি জানতাম আমি। ওটাই মোটিভ।</div><div>জানোয়ার টা লবি তে সোফায় বসে মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত । আস্তে করে পেছনে গেলাম। হাতেই ছুরিটা আলোতে চক চক করে উঠলো। মুখ টা চেপে ধরে আলতো করে একটা টান গলায়। গলাটা কেটে হাঁ হয়ে গেল। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকলো। কোনো আওয়াজ হয়নি। মুখটা আস্তে করে ছেড়ে দিয়ে দেখলাম ঘাড় টা কাৎ হয়ে পড়ে গেলো। সোফাটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। একটু আওয়াজ করলাম। এবার সুমনা বেরিয়ে এলো ঘর থেকে, পরনে শুধু বিকিনি। একটু এগিয়ে এসে আবছা আলো তে ওর পক্ষে বোঝা অসম্ভব ছিল, কি চলছে এখানে? ওয়াশ রুমের সামনে টায় এসে হটাৎ রক্তে পা হড়কে পরে গেল দরজার উপরে। মাথাটা সজোরে আঘাত লাগলো দরজাতে। আমিও ছুটে গিয়ে ছুরিটা সজোরে ঠিক বুকের বাঁদিকে গেথে দিলাম। দরজা টা খুলে গেল, সুমনা পরে রইলো বাথরুমে ঢোকার মুখটায়।</div><div>আমি একটা সিগারেট ধরালাম। দরজার কোনটায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সুমনা কে দেখতে থাকলাম। এই মেয়েটাকে একদিন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। স্কচের বোতল আর গ্লাস টা নিয়ে সোজা বাথটাবে গিয়ে বসলাম। রক্তে ভেজা মেঝেটা কেনম যেন আঠালো হয়ে গেছে। আমাকে যেন কেউ পেছন থেকে টেনে ধরছিল আসার সময়।এখন অনেক শান্তি বিরাজ করছে ঘরটা জুড়ে। ফোন করে দিয়েছি পুলিশ কে, ওরাও চলে আসবে কিছুক্ষনের মধ্যে। কালকের খবরের কাগজের হেডলাইন হবে, বিখ্যাত ব্যাবসায়ী নিজের বাড়িতে স্ত্রী ও তার এক বন্ধুকে নৃশংস ভাবে খুন করেছেন। শোনা যায় ব্যাবসায়ীর ওই বন্ধুর সাথে ওনার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক ছিল।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-17703043032550776052020-04-28T01:18:00.001+05:302020-04-28T01:18:29.541+05:30#ছোট_গল্প#বিজানুর_বিষে_নারদ#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#ছোট_গল্প</div><div>#বিজানুর_বিষে_নারদ</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>সমগ্র দেশ করোনা বিজানুর কারণে লক ডাউন চলছে। মানুষেরা সব ঘরের ভেতরে। সবচাইতে সমস্যায় পড়েছেন নারদ মশাই। দেবদূত হিসাবে ওনার একটা বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়, তা হল সংবাদ সংগ্রহ বা মানুষ ও দেবতাদের তথ্যের আদান প্রদান করা।সাংবাদিক ভাইয়াদের মতো কাছে তো আই কার্ড নেই তাই কিভাবে ভগবানের নাম প্রচার তাই নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন ভদ্রলোক। এমন সময় নারায়ণ পত্নী কে নিজের অবস্থার কথা জানালেন নারদ মশাই। মাতা এমত অবস্থায় কি করা যায়?</div><div>আমি আর কি বলি বলুন তো। আপনি একবার ওনার সাথে কথা বলুন।</div><div>নারায়ণ! নারায়ণ! </div><div>প্রভু এখন আমি কি করি লক ডাউন নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি। সে সেদিন নারায়নপুর গ্রামে গেছিলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটু জিরিয়ে নিচ্ছি হটাৎ দেখি নীল জামা পড়া একটি ছেলে কাপড়ে মুখ বাধা। বললে কি দাদু এসব ফেন্সি ড্রেস কম্পিটিশন টন আছে নাকি? এই সময় লোকে ঘরে বসে আছে আপনি সেজেগুজে কোথায় চললেন? আর সাজটাও হয়েছে একেবারে ব্যান্ড পার্টির মতো। বাড়ি যান তাড়াতাড়ি।</div><div>আমি বললাম বাবা কিছু মনে কোরোনা আমি একটু মন্দিরের পুরোহিত মশাইয়ের সাথে কথা বলবো। </div><div>আবার এসব কোরোনা টোরোনা কেন? আর পুরুত মশাই কে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পূজা বন্ধ আছে। লক ডাউন উঠলে আসবেন। এখন যান দেখি। পাতলা হন তাড়াতাড়ি।</div><div>আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, আমি নারদ। ভগবানের তথ্য আদানপ্রদান ই আমার কাজ। তাতে ছেলেটি বললো আপনার টা কি ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্ট নাকি এসেনশিয়াল? </div><div>আমি উত্তর দিতে পারিনি! পরে বললে ওসব মুখে বলে লাভ নেই দাদু আপনি অথরিটির লেটার লাগবে। যান আগে কাগজ নিয়ে আসুন। আমি আবার বলতে যাচ্ছিলাম, একেবারে লাঠি উচিয়ে তেড়ে এলো। বললো বয়স্ক মানুষ বলে ছেড়ে দিলাম নয়তো পোঁ.....</div><div>না ভগবান ওটা আপনাকে বলা যাবেনা। </div><div>নারায়ণ! নারায়ণ!</div><div>তা আপনি এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন বিশ্রাম নিন কিছুদিন। </div><div>না ভগবান আপনি সিল ছাপড়া দিয়ে একটা অথরাইসইড লেটার বানিয়েই দিন। ওটা নিয়েই যাবো নয়তো এই নীল জামা পড়া ছেলে গুলো খুব সক্রিয়। আমার তো ছবি তুলে নিয়েছে ওদের মোবাইলে। বলেছে এই ছবিটা ওদের বন্ধু দের কাছে পাঠিয়ে দেবে, কেউ যদি আপনাকে বাইরে দেখে তাহলে সত্যি সত্যি পোঁ.... থাক আর বললাম না। আমি আবার একবার ছবিটা দেখতে চেয়েছিলাম। সেই কবে দেবলোকের আর্টিস্ট কে দিয়ে একটা রংছবি করা হয়েছিল, অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। ও দেখতে গিয়ে আমাকে একটা সুন্দরী উর্বশির ছবি দেখালো, কিন্তু খুব গরিব। একেবারে জামা কাপড় নেই বললেই চলে। তার পরে বুঝতে পারলো ভুল হয়ে গেছে, ভুল করে অন্য ছবি দেখিয়ে ফেলেছে। যাক তারপর আমার ছবিটা দেখালো, সত্যি খুব সুন্দর লাগছিল। আমাকে বললো দাদু আপনার ব্লুটুথ টা অন করুন দিয়ে দিচ্ছি।</div><div>আমি বললাম কি বললে বাবা?</div><div>ছেলেটা বললো মোবাইল নেই?</div><div>বললাম আমাদের মোবাইল লাগেনা বাবা আমার, সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি। </div><div>বললো এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে দাদু। তা যদি সরাসরি যোগাযোগ হয়ে যায় তাহলে এখানে আসার কি দরকার? </div><div>সত্যি প্রভু খুব কঠিন প্রশ্ন। এর উত্তর আমি বোঝাতে গেলে ওর লাঠির ঠেলা আমার বুঝতে হত।</div><div>নারায়ণ! নারায়ণ! কিছু তো ব্যাবস্থা করুন প্রভু।</div><div>ঠিক আছে কাল যখন যাবে আমার একটা মার্সিডিজ বেঞ্চ নিয়ে যাবে আর ড্রেস টা চেঞ্জ করবে সুট টাই পড়বে। তোমায় বাধা দেবেনা।</div><div>সত্যি প্রভু আপনি মহান, আজ গাড়ি নিয়ে গেলাম। কেউ কিছু জিজ্ঞেসা করা তো দূরে থাক। সবাই সেলুট করল। </div><div>তাহলে কি বুঝলে নারদ?</div><div>বুঝলাম বাহ্যিক আড়ম্বর টাই সবকিছু। অন্তঃসারহীন আড়ম্বরে মানুষ বেশি মোহিত। ভগবান মানেই পয়সা।</div><div>সত্য বচন নারদ। তবে মানুষদের জন্যে আজ তোমাকেও, নিজেকে পরিবর্তন করতে হোল।</div><div>তবে ভেতর থেকে পরিবর্তিত হয়ে যেওনা যেন।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-45536466690754448642020-04-28T01:17:00.001+05:302020-04-28T01:17:18.849+05:30#ছোট_গল্প#রমেন_বাবুর_অন্তর্ধান#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#ছোট_গল্প</div><div>#রমেন_বাবুর_অন্তর্ধান</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>রমেন বাবুর বাড়ি বাগবাজারে কিন্তু লোহাপট্টিতে কাজের সূত্রে কলেজস্ট্রিট এলাকায় একটা পাইকারি লোহার গুদামে অন্যসব কর্মচারী দের সাথেই থাকতে হয়। বহুদিনের কর্মচারী এবং শিক্ষিত মানুষ হিসাবে ওই গুদামের যাবতীয় দায়িত্ব রমেন বাবুর হাতে। ম্যানেজার একজন আছেন বটে কিন্তু দায়িত্ব রমেন বাবুর ঢের বেশি। যথেষ্ট বিশ্বস্ত মানুষ হিসাবে শেঠ ওনাকে পুরোপুরি ভরসা করেন। আর করবেন নাই বা কেন, প্রায় পঁচিশ বছর হয়ে গেল এই গোডাউনটাই ওনার জীবন। সেই ছোট্ট বয়স থেকে এই ব্যাবসার নাড়ি নক্ষত্র গুলে খেয়েছেন। বড় শান্ত স্বভাবের মানুষ কোনো দিন কোনো কর্মচারীর সাথে দুর্ব্যবহার করতে শোনা যায়নি। শেঠ অনেক দায়িত্ব দিতে চেয়েছেন কিন্তু রমেন বাবু অস্বীকার করে বলেন, "এই সাধারণ মানুষটাকে অসাধারণ করার দরকার নেই সাহেব। আমি এখানেই ঠিক আছি।"</div><div>এহেন রমেন বাবু হটাৎ একদিন নিখোঁজ হলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি হল। বাড়িতে খবর নেওয়া হল। কিন্ত কোনো খবর পাওয়া গেলোনা। মারওয়াড়ি শেঠ নিজে অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু সব চেষ্টাই বিফল হলো।</div><div>আরো একটা খবর সবার চোখে পড়লো বিশ্ব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সুজিত ভট্টাচার্য নিজ বাসভবনে থেকে হটাৎ নিখোঁজ হয়েছেন।</div><div><br></div><div>রমেন বাবুর ছেলের বয়েস বারো। একটু বেশি বয়সে বিয়ে করেছেন ভদ্রলোক।নিঃস্ব অবস্থায় কাজ করতে ঢুকে, ঘাড় টা উঁচু করে দাঁড়াতেও তো সময় লাগে। তার মধ্য ছোট বোনকে সঠিক পাত্রে পাত্রস্থ করতে গিয়ে কখন যে বয়েস টা চল্লিশ ছুই ছুঁই হয়ে গেল বুঝতেও পারলেন না। </div><div>ছেলেটার বয়েস খুব কম, শেঠ রমেন বাবুর স্ত্রী কে ওনার একটা অফিসে কাজ দিলেন। ছেলের শিক্ষাই দায়িত্ত্ব উনিই নিলেন। একজন দায়িত্ববান সৎ কর্মচারীর প্রায় সারা জীবনের সমর্পিত যোগদানের এটুকু কর্মফল দেওয়া উচিত বলেই মনে করেছিলেন শেঠ। প্রভিডেন্ট ফান্ড বলে তো কিছু ছিলোনা। তবুও শেঠ যা দিলেন তা খুব খারাপ কিছু নয়।</div><div>বছর দুয়েক বেশ ভালোই চলছিল। হটাৎ একদিন সবাই কে অবাক করে রমেন বাবু এসে হাজির। বয়েস টা যেন আরো কমে গেছে বলে মন হল সহকর্মীদের। খবর পেয়ে সবাই চলে এসেছেন স্ত্রী, ছেলে আর সর্বোপরি কোম্পানির মালিক নিজে। রমেন বাবু কিন্তু সবাই কে দেখে বেশ বিব্রত হলেন। সবাই কেন এসেছে? স্ত্রী কে কোম্পানির সারিতে তো চিনতেই পারছিলেন না।</div><div>সাহেব কি হয়েছে, আপনি এসেছেন। কিছু কি দরকার ছিল? রুমা তুমি?</div><div>এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি? বললেন শেঠ</div><div>কোথায় ছিলে এতদিন বলো? রুমা, কান্না মাখা গলায় জিজ্ঞাসা করলো।</div><div>নিজের প্রশ্ন টা দমিয়ে রেখে অবাক হয়ে উত্তর দিলেন </div><div>সেকি? সকালে সুজিত ভট্টাচার্য বাবুর বাড়িতে কালেকশনে গেছিলাম। উনি একা মানুষ। এর আগেও ওনার অনেক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় লোহার খোল আমাদের কোম্পানি ওনার জন্যে বানিয়েছে। উনি আমাদের কাজে যথেষ্ট খুশি। ওনার মনের মত কাজ হলে উনি কোনো কার্পণ্য করেন না। আজ যখন কালেকশনে গেলাম, সুজিত বাবু আমাকে ওনার ল্যাবে বসিয়ে ঘরে গেলেন চেকটা আনতে। সাধারণত উনি সারা দিন ল্যাবে থাকতেই ভালো বাসেন। পাশেই আমাদের তৈরি একটা লোহার বাক্স একদম একটা মানুষের অবয়ব। অনেক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম লাগানো ছিল। নিজেদের তৈরি জিনিস টা একবার ভালো করে দেখার ইচ্ছে জাগলো মনে।</div><div>মেশিনটা তে ঢুকতেই দরজাটা একাই বন্ধ হয়ে গেল। ভেতরে একটা টিভি স্ক্রিন চালু হয়ে গেল। অনেক রকম গাণিতিক হিসাব দেখাচ্ছিল। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি বেরোবার চেষ্টা করলাম। একটু পরেই দরজাটা খুলে গেল একা একা। বেরিয়ে দেখি আড়াইটা বাজে। আমি খুব বেশি হলে পাঁচ মিনিট ছিলাম ভেতরে। অথচ সেই সকালে এসেছি, একটু অবাক হলাম আমি। বাক্সটাও জং ধরে গেছে দেখলাম। এত তাড়াতাড়ি এসব কিভাবে হলো বুঝে উঠতে পারলাম না। সুজিত বাবুর খোঁজ করলাম। ফোনও করলাম কিন্তু ফোন বন্ধ করা ছিল। অন্ধকার ঘরে নিজেকে ছাড়া কোনো মানুষ কে খুঁজে পেলাম না। একটা চেক চাবিটার নীচে চাপা দেওয়া ছিল। দেখলাম আমাদের কোম্পানির নামেই ইস্যু করা। আমি আর দেরি করলাম না।তাড়াতাড়ি বেরিয়ে চলে এলাম। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। সেই চাবিটা এনে দরজাটা খুললাম। বাড়ির বাইরে টাও যেন কিছুক্ষনের মধ্যেই অন্যরকম হয়ে গেছে। অপরিস্কার যেন দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয়না। কিন্তু সকালে যখন বাড়িতে ঢুকেছিলাম একেবারে ঝকঝকে ছিল বাইরে টা। নীচে রাখা গাড়িটাও যেন দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হইনি। বাইরে থেকে তালা মেরে এসেছি। আমি আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম, এই চাবিটা আর চেকটা নিয়ে। </div><div>মালিক ভদ্রলোক খুব মন দিয়ে শুনছিলেন কথা গুলো। তারপর রমেন বাবুর হাতের থেকে চেকটা নিয়ে বললেন, চেকের তারিখ টা দেখেছেন রমেন বাবু?</div><div>হ্যা দেখেছি! সাতাশ দশ দুহাজার সতেরো, আজকের ডেট দেওয়া আছে তো! অসুবিধা নেই কাল ব্যাংকে জমা করে দেবো। </div><div>রমেন বাবু আজ তারিখ কত? একবার মোবাইলে দেখুন তো।</div><div>সাতাশ দশ দুহাজার উনিশ? রমেন বাবু হতবাক হয়ে গেলেন। তবে কি হয়েছিল ওই বাক্সের ভেতরে? ওনার মাথার ভেতর সব গুলিয়ে যেতে লাগলো।</div><div>পরে থানায় গিয়ে সব জমা করে দিয়ে আসা হয়েছিল। </div><div>কিন্তু সুজিত বাবুর আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। হয়তো কোনো অসীমের যাত্রা করেছেন ভদ্রলোক, নিজের সময় যান নিয়ে।</div><div>পুলিশ পরে গিয়ে শুধু লোহার জং ধরা খোলটা ছাড়া আর কোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খুঁজে পাননি।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-22763321778403281772020-04-28T01:15:00.001+05:302020-04-28T01:15:57.763+05:30#উপলব্ধি#অনুকল্প#সৌরভ_কুমার_নাথ#উপলব্ধি<div>#অনুকল্প</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>পৃথিবীতে যখন এসেছিলাম, মানুষের সাথে পরিচয় করে আসিনি। খুব কান্না করতে করতে এসেছিলাম, তবু সবাই হেসেছিল খুশি হয়ে।</div><div>প্রতি ক্ষণে ঠেকে ঠেকে এবং মা বাবার সহযোগিতায় আস্তে আস্তে বেড়েছি সময়ের নিয়মে। কখনো পুড়িয়েছি হাত কখনো মাথা ফটিয়েছি খেলার ছলে। তখনো পৃথিবী কে খুব সুন্দর লাগতো। সারাদিন খেলে বেড়ানো আর অজানা কে জানার নেশায় লুকিয়ে কখনো গঙ্গার পারে বা বন্ধুবান্ধবের সাথে বিড়ির টান। না জীবন অতটাও সোজা নয়। ক্লাসে অনেক বন্ধুর আত্মকেন্দ্রিকতা আর কিছু হৃদয় খোলা বন্ধুর সহাবস্থান বুঝতে শিখিয়েছে কোনটা ভুল কোনটা ঠিক। এভাবেই দিন দিন শিক্ষা নিয়ে চলেছি সমাজ থেকে। এখন অনেকটাই বড়ো হয়েছি। ভুল ঠিকের মাঝেও একটা অবস্থান আছে আবিষ্কার করছি এবং তা হল যুগের সাথে পা মেলানো। সবাই যা বলছে তাই সত্যি, তা সে সত্যি নাই বা হল।</div><div>এই তুই বেশি বকছিস! বেড়ে পাকা হয়েছিস না? আর বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, নয়তো ফল ভুগতে হবে। চুপচাপ বাড়ি যা।</div><div>এখন ভয় হয়, সত্যি টা কি সত্যিই সত্যি নাকি মিথ্যেটাকে মিথ্যে বলে ভাবতে হবে। খুব জটিল এই মানসিকতাকে যে খুব সরল ভাবে মেনে চলবে সেই সঠিক এবং এই সমাজে চলার উপযুক্ত। আমি সোজা পথে হেটে বেশি দূরে পৌঁছাতে পারিনি, কারণ পথে প্রচুর জ্যাম, খুব ভিড়। বাকা পথে যাবার সাহস হয়নি। আর যে পথ চিনতে পারলে অনেক অলিগলি দিয়ে খুব সহজে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় সেই পথ দেখলে মনে হবে ভাণ্ডারা হচ্ছে। মানুষ রূপী শয়তান এখন এই মানুষগুলোকে খুঁজে বেড়ায় আর ওই অলিগলির রাস্তা ধরে পৌঁছে দেয় গন্তব্যে, তবে কিছুর বিনিময়ে। </div><div>কিসের বিনিময়ে? কখনো অর্থের কখনো বা বিবেকের বা কখনো আত্মার। তবে তুমি জীবনযুদ্ধে কিভাবে জিতছো তা এখন অপ্রয়োজনীয়। তুমি জিতেছো কিনা তাই দেখার। আর তুমি যদি জিতে থাকো তবে তোমার মুখ নিঃসৃত বাক্যই বেদ বাক্য হবে, তোমার হাতেই থাকবে রাজদণ্ড, তুমি শাসন করবে যতসব সোজাপথে চলা পরাজিত জীবন সংগ্রামীদের। তাদের শ্রমেই তুমি আরো ধনবান হবে আর তাদের বিরোধিতার নাম হবে দ্রোহিতা। তার মৃত্যুর সময় সে বৈভব ছেড়ে যাওয়ার দুঃখে কান্না করবে কিন্তু মানুষ উৎসব করবে আর ভুলে যাবে দুদিন পরে।</div><div>কিছু মানুষ আছে যারা সেই সব বাধা অতিক্রম করে পৌঁছাবে গন্তব্যে, শোষণ যন্ত্রকে মাটির নিচে পুঁতে দিয়ে নুতন সমাজের ভীত তৈরি হবে। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। সেই মানুষটি যাবার সময় হাসতে হাসতে যাবে আর মানুষ তার জন্যে কাঁদবে। যদি কোনো মূর্তি তৈরি নাও হয় সেই মানুষটির জায়গা হবে মানুষের মনের মণিকোঠায় ভগবানের ঠিক পাশে।</div><div>না আমি প্রথম বা দ্বিতীয় হতে চাইনা। আমি শুধু চাই সত্যির মা যেন অকালে না মরে আর মিথ্যের বাবার অসীম দম্ভ যেন সমূলে ধ্বংস হয়ে।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-37947558624909485492020-04-28T01:14:00.001+05:302020-04-28T01:14:22.121+05:30#ছোট_গল্প#অমলের_সেই_দিনটা#সৌরভ_কুমার_নাথ<div>#ছোট_গল্প</div><div>#অমলের_সেই_দিনটা</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div><div>অমল যখন হেড অফিস থেকে বেরোলো তখন প্রায় সাড়ে ছটা বাজে। ধর্মতলা থেকে শিয়ালদা যেতে হবে তার পর আবার সাতটার শান্তিপুর লোকাল। আকাশটাও কেমন যেন থমকে আছে। আকাশে মেঘ বেশি নেই বটে তবুও কেমন যেন গুমরে রয়েছে।</div><div>সেই সকাল ছটায় বেরোনো তার মধ্যে আবার এতদূর আসার অভ্যাস নেই, খুব ক্লান্ত লাগছিল অমলের। সারাদিন ঠিক করে খাওয়াও হয়নি ওর। অফিস থেকে এতদূর অফিসের কাজে আসতে হবে শুনে বাকিরা পালিয়ে গেলেও অফিসের বয়স্ক বড় বাবুর অনুরোধ ফেলতে পারেনি অমল। গত বছরই এসিস্টেন্ট হিসাবে অফিসের এস্টাব্লিশমেন্ট ডিপার্টমেন্টে যোগদান করেছে। চতুর্থ শ্রেণীর যে কর্মচারী টি এই কাজটি করত বর্তমানে পা ভেঙে বাড়িতে, অগত্যা।</div><div>সকালেই পৌঁছে যাবার কথা কিন্তু কপালের নাম গোপাল। রেল বহির্ভুত কারণে বেশ কয়েক ঘণ্টা ট্রেন লেট। তার পর আবার বাস-ট্রাম চেনা নেই, অনেক কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত লাঞ্চের সময় গিয়ে কোনো মতে অফিসে পৌছালো অমল। অনেক সকালে বেরিয়েছে, আর বরাবরই বাইরের খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই পেট রোগ অমলের তাই রাস্তায় কিছু খাওয়া হয়নি।</div><div>যে ভদ্রলোক শান্তিপুরের দায়িত্বে আছেন তার টিফিন করা শেষ হয়নি অগত্যা আরো আধ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হল। শেষে ভদ্রলোক যখন এলেন তখন প্রায় পৌনে চারটা বেজে গেছে।</div><div>আরে মশাই আপনার তো সকালে আসার কথা, আপনারা সব কাজ শেষ দিন অব্দি ফেলে রাখবেন আর যত ঝক্কি সব আমাকে পোহাতে হবে। এ আপনাদের কিরকম আবদার বাপু।</div><div>দিন! দিন! কাগজ গুলো দিন তো। আবার আমার এগুলোকে ঠিক ঠাক করতে হবে।</div><div>অমল কাগজ গুলো এগিয়ে দেবার পর মুখের দিকে আর চোখে তাকিয়ে ভদ্রলোক বললেন।</div><div>সেকি জেরক্স আনেন নি ? আপনারা কি শুরু করেছেন বলুন তো? যান নীচে থেকে জেরক্স করে আনুন সব।</div><div>পেট ক্ষীদেয় ছুঁই ছুঁই করছে তার মধ্যে সব ঝক্কি সামলে সব কিছু সেরে কোনোমতে অফিস থেকে বেরোলো অমল।</div><div>কি জানি সকালে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম। দিনটা জঘন্য গেল। আর খেয়ে দরকার নেই এই ভাবতে ভাবতে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে অমল দেখলো ব্যাপক জ্যাম। সব বাস-গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এমত অবস্থায় কি করা যায় তাই ভাবতে ভাবতে খিদে আর ক্লান্তির কথা ভুলে গিয়ে শেষে হেটে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো অমল। পকেট থেকে হজমি গুঁড়ো বার করে মুখে চালান করলো অমল, ওটা ওর অনেক দিনের অভ্যেস। আজ একটু অন্য রকম লাগছে গুঁড়ো টা।</div><div><br></div><div>আকাশ টা একটু থমথমে ছিল বটে কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে কোথা থেকে মেঘ এসে পুরো আকাশটাকে অন্ধকার করে দিল। যাদের অনুসরন করে রাস্তা চেনার ভরসায় পথে নেমেছিল অমল, সেই মানুষ গুলো হটাৎ করে কেমন যেনো কর্পূরের মত উবে গেল। শুরু হয়ে গেল বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রচন্ড বৃষ্টিপাত। কাগজ পত্র ব্যাগের ভিতরে ফাইলে আছে তাই সেগুলো নষ্ট হবার সুযোগ নেই আর এই ঝড়ের মধ্যে ছাতা খুলে যাওয়াটা কি ধরণের বোকামি সেটা অমল ভালোই জানে। সুতরাং সব শেষে ভিজে ভিজে স্টেশনে যাওয়া ছাড় আর কিছু গতি রইলনা।</div><div><br></div><div>কলকাতায় সচরাচর লোডশেডিং হয়না কিন্তু সেদিন হটাৎ পুরো কলকাতাটাই যেন অন্ধকার হয়ে গেল, যেন গোদের উপর বিষফোড়া।</div><div>অমল জানে ধর্মতলা স্ট্রিট ধরে আগালে ঠিক মৌলালি পৌঁছে যাবে। কিন্তু ঝড় বৃষ্টির সেই রাতে গহীন অন্ধকারে হাটু জল ঠেঙিয়ে চলা যেন কঠিন হয়ে চলেছে। মনে হচ্ছে যেন সুন্দরবনের সমুদ্রতীরে সুন্দরীগাছের জঙ্গলে হাটু জলে একা একা হেটে চলেছি। এরকম কোনোদিন দেখিনি। একটাও জন মানব নেই এই মহানগরীর এই সবচাইতে ব্যস্ততম রাস্তায়। কোনো দোকানে সামান্য একটা টর্চ বা ল্যাম্প জ্বালানো নেই। বড়ই অদ্ভুত লাগে অমলের। এ যেন এক অচেনা মৃত্যুপুরী তে পৌঁছে গেছে। ফিরবার কোনো পথ নেই বলেই মনে হচ্ছে। </div><div>আস্তে আস্তে ঝড় বৃষ্টি কমে এলো কিছুক্ষনের মধ্যে আকাশটা একেবারে পরিষ্কার, জলটাও যেন নেমে গেল হটাৎ করে। কিন্তু একি?</div><div>এ যেন এক পুরোনো মফস্বলের গলিতে হেটে চলেছি। কোথায় ব্যাবসায়িক দোকানে ভর্তি ধর্মতলা, মৌলালি মোড়? এ কোথায় এলাম আমি, মনে মনে ভাবে অমল। মনে হয় নির্ঘাত রাস্তা ভুল করেছি। </div><div>সামনে এক ভদ্রলোক কে দেখে বুকে একটু বল পেল অমল। ভদ্রলোক পরনে ধুতি গায়ে সাদা পাঞ্জাবি। এই কলকাতা শহরে ধুতি পাঞ্জাবি পড়া মাঝবয়সী লোক? বিশ্বাস করতে পারছে না অমল।</div><div>দাদা শিয়ালদা স্টেশন টা কোন দিকে? </div><div>কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। একটু অবাক হয়ে অমল আবার বললো দাদা শিয়ালদা....</div><div>হটাৎ যেন লোকটা অমলের খুব কাছে দিয়ে সাঁই সাঁই করে হেটে বেরিয়ে গেল। ব্যাপার টা অস্বাভাবিক। মানুষের শরীরের এত কাছে দিয়ে কোনো মানুষ যেতে পারেনা। তার মধ্যে আবার পুরো রাস্তা ফাঁকা।</div><div>এই ফাঁকা রাস্তায় ব্যাপার টাকে অনুধাবন করে যে তাৎক্ষণিক ভয়ের সূচনা হল তা বোধহয় ছোট বেলায় পড়া সেই রহস্য রোমাঞ্চ বইয়ের থেকেও ভয়ঙ্কর। এমন সময় মনে হলো আস্তে আস্তে হালকা হয়ে যাচ্ছে শরীরটা, যেন মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে অমল। পায়ের দিকে তাকিয়ে অমলের বিস্ময়ের শেষ রইলো না। পায়ের পরেই এক গভীর খাদ, তল দেখা যাচ্ছেনা। মাথা তুলে দেখলো তাঁরা গুলো যেন ওর দিকে এগিয়ে আসছে, মহাকাশের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে যেন।</div><div>চোখটাকে জোর করে খুলে, অনেকটা পড়ি কি মরি করে দৌড় লাগালো অমল। কোথায় যাচ্ছে চারিদিকে কি চলছে বোঝার মতো সময় নেই। শুধু প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়ানোটাই সমীচীন মনে হল। কিন্তু কোথায় কি? ফুটপাথ টা যেন চওড়া হওয়া শুরু করেছে। এত বিশাল ফুটপাথ ও হতে পারে আমল ভাবতেও পারেনা। পিঁপড়ে গুলো এত বড় হয়ে গেল কি করে। হটাৎ কোথা থেকে একটা বড় পাতা এসে পড়ল উপরে। এত বড় পাতা। সব গুলিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। কেমন একটা ঘুম ঘুম পাচ্ছে অমলের রাস্তায় শুয়ে পড়লো অমল</div><div>ঘুম যখন ভাঙলো তখন নিজেকে হাসপাতালের একটা বেডে আবিষ্কার করলো অমল। বাড়ির লোকজন, বয়স্ক বড়বাবু সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছে এভাবে চেয়ে। আস্তে আস্তে উঠে বসলো অমল </div><div>এই আফিমের নেশা কবে থেকে ধরেছ বাবা? বললেন বড় বাবু।</div><div>এটা ওর দোষ নয় বললেন অমলের মা। আসলে অমলের দাদুর প্রচুর বয়েস হয়েছে। মারিজুয়ানা ওনার নেশা। না দিলে পাগলামো করেন। তাই বলে সারাদিন তো দিয়ে রাখা যায়না। তাই সন্ধের সময় একটু দেওয়া হয়। ওটা নিয়ে উনি ঘুমিয়ে পড়েন। ডাক্তার বাবুর প্রেসকিপশন আছে। দুর্ভাগ্যবশত সেদিন হজমি গুঁড়োর কৌটোটা আর ওই মারিজুয়ানার পাত্রটা পাশাপাশি ড্রয়ার এ রাখা ছিল। আমি বিকালে বুঝতে পেরে ফোন ও করেছিলাম কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কোনো উত্তর না পেয়ে গাড়ি নিয়ে কলকাতায় এসেছি। রাতেই খুঁজে পেয়ে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। ড্রাগের ব্যাপার বলে পুলিশ ও খোঁজ খবর করবে জানতাম তাই প্রেসকিপশন টাও নিয়ে বেরিয়েছিলাম। </div><div><br></div><div>বাবা অমল এবার থেকে একটু দেখে নিয় বাবা কোন হজমি নিয়ে বেরচ্ছ, বলেন বড়বাবু। সবাই একসাথে হাসিতে ফেটে পড়েন।</div>sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-7958543453944427920.post-49514834719072616412020-04-28T00:59:00.001+05:302020-04-28T00:59:53.216+05:30#অসুখ<div>#অসুখ</div><div>#ছোট_গল্প</div><div>#সৌরভ_কুমার_নাথ</div><div><br></div>অনেক স্বপ্ন থাকে মানুষের জীবনে। বলাইয়ের ও ছিল, খুব সাদা মাঠা কিছু। একটা ভালো চাকরি, মাথার উপরে ছাদ, একটা ছোট সংসার আর একটু ভালোবাসা। নিজের দায়িত্বগুলো পূরণ করার পর যদি সময় পায় তবে নিজের সুপ্ত বাসনা গুলোকে সার্থক হতে দেখা এটাও তার মধ্যে একটা। স্বপ্ন দেখার অধিকার সকলের থাকলেও সার্থকতাটা অনেক অংশে নিজের উপর নির্ভর করে, তবে কিছু কিছু স্বপ্ন আছে যা পূরণ হওয়ার উপর বোধ হয় মানুষের হাত থাকেনা। অপূর্ণ থাকা আলাদা বিষয়, কিন্তু অনেক অংশে সার্থক হওয়ার পরে যখন সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়, সেই আঘাত টা অনুভূত হয় বুকের পাঁজরের ভিতরে।<br>
<br>
কোনোদিন ভালো ছাত্র হয়ে উঠতে পারেনি বলাই। একটা সাধারণ ছাত্র যেভাবে বেড়ে ওঠে ঠিক সেইভাবেই মাধ্যমিক পাস করে দ্বিতীয় বিভাগে। বাড়ির থেকে একটা চাপ ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে, নয়তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার। গ্রামের বাইরে একটা কলেজে ভর্তি হতে হয় শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে সুযোগ পাওয়ার জন্য।<br>
উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরে সেই কলেজ থেকেই পাস কোর্সে বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হওয়া।<br>
যখন সমস্ত পথ শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে ঠিক সেই সময় হঠাৎ এক বাল্য বন্ধুর কাছে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপারে জানতে পারে বলাই। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করে বাড়ির কাছে একটা এঞ্জিনীরিং কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। পাস করে বেরোনোর পর একটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে যায় ভাগ্যক্রমে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যাওয়া একটা বড় ঘটনা বাঙালিদের জন্যে, যদিও সেই অমোঘ আকর্ষণ ছাড়িয়ে বাইরে যেতে হয় বলাইকে। কলেজে পড়াকালীন হোস্টেলে থাকার কারণে বাইরে থাকার একটা অভ্যাস ছিল, তবুও বাবা মা কে ছেড়ে দূর রাজ্যে গিয়ে কাজ করা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একটু ভয় ছিল বুকের মধ্যে।<br>
দিন যায় রাত আসে আবার দিন যায়, এভাবেই কেটে গেছে কয়েকটা বছর, অনেক চড়াই উৎরাই এর মধ্যে দিয়ে গেছে সেই দিন গুলো, এর মধ্যে দুবার বাড়িতে এসেছে বলাই, বাড়িতে ফিরে, দিন গুলো যেন কয়েক মুহূর্ত শেষ হয়ে গেছে। ফেরার সময় বার বার পিছনে ফিরে সেই ছোটবেলার গলি গুলোকে মনে পড়েছে। সেই গোল্লাছুট, দাড়াবান্ধা, সাতচারা খেলা।<br>
শেষে ফেরার একটা সুযোগ পায় বলাই। বাড়ি গিয়ে একটা সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল শেষ বার, তাতেই বুঝি ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হয়েছে, সরকারি অফিসের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চাকরি। আসলে জীবন কে যতটা সোজা মনে হয়, ভদ্রলোক অতটা সোজা নন।<br>
বিয়ে করার পরে একটা ঝড় উঠেছিল জীবনে, সেটা আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে যায় সময়ের সাথে সাথে। দিনের চাকা ঘুরতে থাকে আর সময় বয়ে চলে। <br>
কিছু খবর আছে যেই গুলো সবাইকে খুশি দেয়, বাড়িতে এক ছোট অতিথির আগমন সত্যিই বলাইয়ের ঘরকে সুখের নীড় বানিয়ে দেয়। সেই ছোট্ট শিশুটার সুখ সুবিধার দিকে সকলের নজর বাড়ির বাকি মানুষ গুলিকে হটাৎ করে ধৈর্য্যশীল করে তোলে। আবার খুশিতে ভরে ওঠে সংসার টা। <br>
এ ভাবেই ছোট তিন্নি সোনা বড় হয়ে ওঠে দিন দিন। জন্মলগ্ন থেকেই প্রচন্ড চঞ্চল তিন্নি। জন্মের দুদিন পরে পা ঘষে ঘষে পায়ের নরম চামড়া তুলে ফেলে। চিন্তা বাড়ে বলাইয়ের কিন্তু কিছু বলতে পারেনা, তিন্নির কে নিয়ে বাড়ির মানুষ গুলোর খুশি দেখে। দিন বয়ে চলে সাথে সাথে বয়েস বাড়ছে ওর। হাটা, চলা ঠিক ঠাক শিখেছে তিন্নি, ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেটে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়, খুব দুরন্ত।<br>
সব ঠিক থাকলেও একটা সন্দেহ ছিল বলাইয়ের মনে। তিন্নি যেন ঠিক করে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেয়না। ডাকলে শোনেনা, অকারণে হেসে ওঠে। বাড়িতে নিজের সন্দেহের কথা জানালে বাড়ির লোকেরা বলে অবান্তর চিন্তা ভাবনা।<br>
দের বছরেও যখন কথা বলতে সেখেনা তিন্নি তখন ও বাড়ির লোক বলে চলেছে, অনেক বাচ্চা দেরি করে কথা শেখে অত চিন্তা করার কিছু নেই।এবার বলাই আর বাড়ির লোকের কথা শুনতে চায়না। সোজা নিয়ে যায় নাম করা একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে।<br>
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার আর এটেনসন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভিটি ডিসঅর্ডার নাম দুটো বলাইয়ের কাছে নতুন নয় কিন্তু এর ব্যাপকতা সমন্ধে কোনো অভিজ্ঞতাই নেই বলাইয়ের, মেডিক্যাল সাইন্স এর কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেনি অর্থাৎ এই রোগের কোন মেডিসিন নেই, বলাই জানতে পারে একজন বিশেষ শিশু চিকিসকের কাছে থেকে। একমাত্র থেরাপি অনেক অংশে সুস্থ করে তুলতে পারে রোগীকে যেমন স্পিচ থেরাপি, অকূপেশনাল থেরাপি ইত্যাদি।<br>
এর পর থেকে শুধু চেষ্টা করে গেছে বলাই। সবার অলক্ষে হয়তো চোখের জল ফেলেছে কিন্তু জীবনযুদ্ধে হার মানবেনা সে। <br>
এখন সবাই আছে বলাইয়ের জীবনে কিন্তু বেঁচে থাকার জন্যে যে জিনিসটা সবচাইতে বেশি দরকার সেই খুশিটার বড্ড অভাব ওদের। স্বপ্ন ভাঙার ব্যথাটা সবাইকে যেন নিশ্চুপ করে দিয়েছে। <br>
তিন্নি সব সময় খুশি কিন্তু সেই খুশিকে ভাগ করে নেবার মত মানসিক স্থিতি খুশির নেই। কারণ এই ছয় বছর বয়সে এসেও নিজের মা বাবা কে ডাকা তো দূর অস্ত, খুজতেও শেখেনি।<!--/data/user/0/com.samsung.android.app.notes/files/clipdata/clipdata_200428_005532_528.sdoc-->sauravhttp://www.blogger.com/profile/03045772527778322578noreply@blogger.com0